অদ্ভুতুড়ে


অদ্ভুতুড়ে

কদিন আগে আমি পিসির বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলাম।অনেকদিন ধরে কেথাও যাওয়া হচ্ছিল না। পিসির বাড়িতে শেষ গিয়েছিলাম আমি ছোট থাকতে যখন পিসি মারা যায়। আর পিসুও বলছিলো,আমি নাকি পিসি নেই বলে আর পিসির বাড়ি যাচ্ছিলাম না।তাই পিসির বাড়িতে বেড়িয়ে-ই  এলাম।সেখানে আমার সাথে এক অদ্ভুতুড়ে ঘটনা ঘটলো। ঘটনাটা শুরু থেকে বলি—


 

পিসিদের বাড়িটা একটা ছাড়া-ছাড়া জায়গায় পড়েছে —মানে পিসিদের বাড়ির আশেপাশে অন্য কোনো বাড়ি নেই।কিন্তু গাছ-গাছালিতে ঘেরা। আবার বেশি জঙ্গলও না মাঝামাঝি। 

আমি ছোটবেলায় এসেছিলাম আর আসা হয়ে উঠেনি।পিসিদের বাড়িটা কেমন তা আমি ভুলেই গেছিলাম। 


 

পিসিদের বাড়িতে গিয়ে আমার আবার সব মনে পড়ে গেল।ছোটবেলায় পিসিদের বাড়িতে খুব আসতাম,এখন আসলেই আসা হয় না।পিসি আমাকে যে আদর করতো—আমাকে কোলে করে সারা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে খাইয়ে দিতো।পিসির সাথে সারাদিন বসে খেলা করতাম। আরো কতো স্মৃতি……

সব স্মৃতি শেষ করে দিয়ে ক্যান্সার আমার পিসিটাকে কেড়ে নিলো। 


 

বাড়িটা বেশ বড়—দুতলা। পিসিদের বাড়িটা জমিদার আমলের।খুব দারুণ। কিন্তু এই এত্তো বড় বাড়িতে থাকে মাত্র তিনজন।আমার পিসু,পিপনদি—পিসির একমাত্র মেয়ে আর হরিকাকু—এই বাড়ির পুরনো চাকর।


 

পিসু আমাকে দেখে বলে,আমি নাকি এখন খুব বড় হয়ে গেছি।পিপনদি আমার গালদুটো টেনে ধরে বলে,'ঈশু,তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস?'

আমার নাম আসলে ঈশান,কিন্তু আমাকে সবাই ঈশু বলেই ডাকে। 

অনেকদিন পর পিপনদি আর পিসুকে সামনাসামনি দেখে খুব ভালো লাগছিল। 


 

খেতে বসে পিসু আমাকে,পিসি আমাকে নিয়ে কি কি করতো,আমাকে কত আদর করতো,আমার সাথে নাকি সারাদিন বসে খেলা করতো—এসব বলতে লাগলো।এসব বলতে বলতে দেখলাম পিসুর আর পিপনদির চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো।

আমার চোখও কখন জানি ভিজে গেলো বুঝতে পারলাম না। 

পিসির নাচের খুব শখ ছিল। নাচতে ভালোবাসতো।পিসি কি  একটা অনুষ্ঠানে নাকি নাচার সুযোগও পেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই পিসি…..


 

পিসির ঘরে গিয়ে পিসির ছবিটা দেখলাম—আমার পিসিটা কি সুন্দর ছিল, দেবীর মতো। আমার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। পিসির ঘুঙুরজোড়াটা পিপনদি নিজের পায়ে পড়ে দেখালো। পিপনদিও দেখতে ঠিক আমার পিসির মতো, যেন প্রতিমূর্তি।


 

পিপনদি আমাকে ওর ঘরে নিয়ে গিয়ে আমাকে অনেকগুলা বই দেখালো।পিপনদির ঘরের ভিতর ছোটোখাটো একটা লাইব্রেরী আছে।এতগুলো বই দেখে আমার চোখগুলো ছানাবড়া হয়ে গেলো।পিপনদি বললো,আমার যে বই ইচ্ছে আমি নিয়ে পড়তে পারি।এমনকি পিপনদি নিজেও গল্প লিখে—আমাকে তার কয়েকটা গল্পের পান্ডুলিপি দিলো।আমি ওগুলোই আগে নিলাম—পড়ে দেখলাম পিপনদি বেশ ভালো লিখে। সামনে নাকি তার একটা বইও আসছে। পিপনদিকে বললাম আমাকে যাতে তার বইয়ের এক কপি গিফট দেয়।পিপনদি বললো তার বইয়ের প্রথম কপি-ই নাকি আমাকে দেবে।


 

রাতে ঘুম আসছিল না।তাই ভাবলাম,পিপনদির থেকে আনা "ভয়ঙ্কর ভূতের গল্প" বইটা পড়ে শেষ করে ফেলবো।বইটাতে মন দিতে পারছিলাম না, বার-বার পিসির কথা মনে পড়ছিলো।অবশেষে বই পড়তে পড়তে কখন জানি ঘুমিয়ে পড়লাম। 

হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলো।কেমন একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনে। আস্তে-আস্তে শব্দটা স্পষ্ট হলো।শব্দটা ঘুঙুরের।খুব স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম। আমার ঘরের বাইরে দরজার সামনে দিয়ে শব্দটা হচ্ছিল। আমি চুপচাপ বসে রইলাম।ঘেমে ভিজে গেছিলাম এক্কেবারে। আবার কখন জানি ঘুমিয়েও পড়লাম। 

আমি পরেরদিন আর পিসু বা পিপনদিকে কিছু বলিনি—তাদেরকে শুধু-শুধু টেনশন দিয়ে কী লাভ?

হরিকাকুকে বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু তাকেও বললাম না যদি পিসু বা পিপনদিকে বলে দেয়?


 

কিন্তু শব্দটা আমি পর পর তিনদিন শুনেছিলাম।অবশ্য চতুর্থ দিন তো ফিরে এসেছিলাম। ভয়ে না কিন্তু।আমার তিনদিন-ই থাকার কথা ছিল। 

তৃতীয় দিনেও আমি একটা খুব ভয়ঙ্কর ভূতের গল্পের বই পড়ছিলাম, তখনই শব্দটা আমি শুনেছিলাম।সেদিন আমি আর ঘরে বসে থাকি নি। শব্দটা যখন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম তখন দরজাটা খুলে বের হলাম।তখনও শব্দ হচ্ছিল ঠিকই,কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। শব্দটা সিঁড়ি দিয়ে ছাদের দিকে যাচ্ছিলো,আমিও ওটার পিছন পিছন সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠলাম।তখন আবার ঘুঙুরের শব্দের সাথে সাথে একটা হাসির শব্দও আসছিল।আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল, পিসি যে আমাকে কোলে নিয়ে গান গায়তো আর হাসতো।

শব্দটা যে কোথা থেকে আসছিল বুঝতে পারছিলাম না। হাসির শব্দটা খুবই ভালো লাগছিল—আমার পিসির কথা মনে পড়ে গেলো।

কিন্তু আমি যে আবার কখন ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম,বলতে পারি না। 

এরপরেরদিনও আমি কিছু বলিনি কাউকে।

ঘটনাটা সত্যিই অদ্ভুতুড়ে ছিল।কিন্তু ঘটনাটা কি সত্যিই আমার সাথে ঘটেছিল—নাকি আমার ভ্রম?

জানি না। 


 

ফিরে এসেও আমি পিসির কথা ভুলতে পারছিলাম না। 

ক্যান্সার জিনিসটা খুব বদ,খুব খারাপ,খুবই শয়তান যে আমার পিসিকে কেড়ে নিয়েছে।



 


Champa Sen Pinky
Nipendra Biswas
Akash
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

১টি মন্তব্য

Nipendra Biswas

Nipendra Biswas

৩ বছর আগে

আমার মনে হয় এটা ভ্রম🤔


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

আমি চঞ্চলা

আমি চঞ্চলা

      গল্প পড়ার শখ আমার ...

চিঠি

চিঠি

রহস্যময়, জানি চিঠিটি আপন...

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

রনি সেখানে যেয়ে ইসরাতকে ...

আমি (পর্ব৩)

আমি (পর্ব৩)

"এমনি দিসিলাম।কি করছিলি ...

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

১.সুবিমলবাবু অনেকদিন পর ...

নীল দ্বীপ

নীল দ্বীপ

           লেখক :ইসরাত ই...

~পিল্টু

~পিল্টু

রেলস্টেশনটার পিছনের দিকে...

সে.....

সে.....

এক নিমষেই কি সব শেষ হয়? ...

কুলফিওয়ালা

কুলফিওয়ালা

কুলফি খেতে ভীষণ ভালোবাসে...

Birthday যখন Foolday!!🎶

Birthday যখন Foolday!!🎶

 Birthday  যখন Foolday🎶...

পড়ন্ত বিকেলে...

পড়ন্ত বিকেলে...

পড়ন্ত বিকেলে...সারাদিন ঝ...

ভয়

ভয়

ছোট বেলার থেকেই আমি ছিলা...

রিক্সাচালক

রিক্সাচালক

প্রখর রোদে দাড়িয়ে আছে আয়...

কে ছিল???

কে ছিল???

আমি আগে ৯ -১০ টার মধ্যেই...

নিদ্রাহীন

নিদ্রাহীন

রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে...

অমাবস্যার রাত

অমাবস্যার রাত

গল্পটা খুব আগের না এইতো ...

ছোটগল্প

ছোটগল্প

আমি গল্প লিখি। তবে লেখক ...

অদ্ভুত-উদ্ভট

অদ্ভুত-উদ্ভট

এ কোথায় এলাম আমি?হঠাৎ দে...

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

❝বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ ...

আমি (পর্ব২)

আমি (পর্ব২)

আজ পূর্ণিমা রাত।ছাদে একা...