—বাপ্পাদার নাম যেভাবে ধাপ্পাদা হলো—
বাপ্পাদা হাঁটতে-বসতে,যেখানে-সেখানে,যখন খুশি তখন মানুষকে ধাপ্পা দিতে পছন্দ করে বা ধাপ্পা দিতে চেষ্টা করে অথবা দেয়!ফলে তার নাম বাপ্পা থেকে হয়ে গেলো "ধাপ্পা"! আর আমরা তো তাকে বাপ্পাদা বলে ডাকতাম—তাই আমরাও ধাপ্পার সাথে 'দা' যোগ করে ধাপ্পাদা বলে ডাকতে শুরু করে দিলাম!
আর আশ্চর্য ব্যাপার হলো,ধাপ্পাদা..তুড়ি..বাপ্পাদা এতে কিছু মনে করে না বরং খুশিই হয়!বলে যে,ধাপ্পা দেওয়া নাকি একধরনের ট্যালেন্ট—যেটা নাকি সবার থাকে না। আর সবাই নাকি নিখুঁত ধাপ্পা দিতেও পারে না! যেটা নাকি বাপ্পাদা ওরফে ধাপ্পাদা পারে!
ফলে বাপ্পাদাকে যে সবাই ধাপ্পা বা ধাপ্পাবাজ বাপ্পা কিংবা ধাপ্পাদা বলে ডাকে—এতে নাকি বাপ্পাদার নিজের ওপর অনেক গর্ব হয়!
—ধাপ্পাদার বেশভূষা—
চোখে একটা চারকোণাকার চশমা। ধাপ্পাদা সবসময় পাঞ্জাবি-পায়জামা পড়ে।পায়ে স্যান্ডেল।হাতে একটা নকল স্বর্ণের ঘড়ি! ঝাকড়া চুলের ওপর মাঝে-মধ্যে ক্যাপও পড়ে। হালকা হালকা দাড়িও আছে!
—কিভাবে আমরা ধাপ্পাদার শিষ্য হলাম—
ধাপ্পাদার ধাপ্পাগুলো আমাদের বেশ ভালো লাগে! খুব মজার মজার ধাপ্পা দেয় তো!
এমন নয় যে,ধাপ্পাদার ধাপ্পাগুলো আমরা সহজেই বুঝে যাই….তা কিন্তু মোটেও না!প্রথম প্রথম আমরা কিছুই বুঝতে পারি না!
আর ব্যাপারটা কিন্তু এমনও নয় যে,ধাপ্পাদা সবসময় ধাপ্পা দেয় বলে,সবাই ধাপ্পাগুলো সহজেই বুঝতে পেরে যায়—মোটেও না।একদমই বুঝতে পারে না —এমন ধাপ্পাই দেয় ধাপ্পাদা!
আর এসব দেখেই মনে হয়,আসলেই ধাপ্পা দেয়া একধরণের ট্যালেন্ট—যা সবার থাকে না।
আর এগুণগুলো দেখেই আমরা ধাপ্পাদার শিষ্য হলাম।
এখন ধাপ্পাদার কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছি হালকা- পাতলা ধাপ্পা দেয়ার!
—ধাপ্পাদার কি আর কোনো কাজ নেই —
ধাপ্পাদার কাজ আছে বইকী!ধাপ্পাদা যে থিয়েটারে অভিনয় করে! আর ধাপ্পা দেয়া তো ধাপ্পাদার শখ।
ধাপ্পাদার অভিনয় কিন্তু দারুণ —অভিনয়ের জন্যেই তার ধাপ্পাগুলো আরো নিখুঁত হয়!
ধাপ্পাদা বলে,"ধাপ্পা দিই কেন জানিস?..কারণ, ধাপ্পা দিতে দিতে আমার অভিনয়টাও প্র্যাকটিস হয়ে যায়। তাই,হাঁটতে-বসতে ধাপ্পা দিই আর অভিনয়টা প্র্যাকটিস করে নিই।"
—ধাপ্পাদার ধাপ্পা দেয়ার কৌশল—
ধাপ্পাদার মতে,ধাপ্পা দিতে হলে আগে যাকে ধাপ্পা দিবো,ওকে নাকি আগে একটু স্টাডি করে নিতে হবে ভালো করে।ওর ক্ষেত্রে কোন ধাপ্পাটা প্রযোজ্য হবে,ওটা আগে ভাবতে হবে—যেটা কাজে দেবে।আর ধাপ্পাগুলো হতে হবে একেবারে অনন্য আর ইন্টারেস্টিং,তা নাহলে যে কেউ ধাপ্পাগুলো বুঝে ফেলবে।আর একটা ধাপ্পা তো দ্বিতীয়বার কোনোভাবেই দেয়া যাবেই না!
আর একটা জিনিস হলো,অভিনয়টা।ধাপ্পার সাথে মিল আছে,এমন অভিনয় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করতে হবে।চোখগুলো তো একদম স্থির রাখতে হবে।আর মুখে তো হাসি ফুটা যাবেই না—এগুলো অবশ্য ধাপ্পা অনুসারে।
আর বডি ল্যাংগুয়েজটাও কিন্তু সেরকমই হতে হবে।
আরেকটা জিনিস জানতে হবে,সেটা হলো কথার ঘুরপ্যাঁচ!কথাগুলোকে এমনভাবে ঘুরপ্যাঁচ লাগাতে হবে যে,ধাপ্পার উপর বিশ্বাস না করা ছাড়া তাদের যেন আর কোনো উপায় না থাকে!
আর হ্যাঁ,মনে রাখতে হবে যে,ধাপ্পাগুলো যাতে কাউকে কষ্ট দিবার জন্য না হয়।এমন ধাপ্পা দিতে হবে যে, যাকে ধাপ্পা দিবো, প্রথমে হয়তো সে একটু মনখারাপ করবে বা হতাশ হবে,কিন্তু পরে যাতে সে অনেক বেশি খুশি হয়!—এটা কিন্তু ধাপ্পাদার আদেশ।
— ধাপ্পাদার বিগত ধাপ্পা—
শুধু একটা ধাপ্পার কথা বলবো—
সেদিন বিলাসদের স্কুলে রেজাল্ট দিবার কথা।বিলাস মনটা নরম করে গোমড়োমুখে স্কুলে যাচ্ছিল।যদিও বিলাস ভালো ছাত্র, তাই রেজাল্টও ভালো হবারই কথা। তাও পরীক্ষার রেজাল্টের দিন কে মন শক্ত করে রাখতে পারে?
সেই সময় ধাপ্পাদা বিলাসের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বিলাসের কাঁধে হাত রেখে এমন ভাব করতে লাগলো যেন ধাপ্পাদা খুবই হতাশ! বিলাসকে বলতে লাগলো, " বিলাস,স্কুল থেকে ফিরছি রে…."
বিলাস কিছু বললো না কিন্তু ধাপ্পাদাই বলতে লাগলো, " আচ্ছা,তুই মন খারাপ করিস না… একবছরে হয়নি তো পরের বছর হবে—তাতে কি হয়েছে?আর একক্লাসে বেশিদিন থাকলে বেশি জ্ঞান লাভ করতে পারবি,বুঝলি?—বড়দাদার কথা মন দিয়ে শোন,মন খারাপ করিস না!আসছে বছর আবার হবে..তুই চিন্তা করিস না!"
বিলাস কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো, " তুমি কি বলছো?"
ধাপ্পাদা বললো, " আমি আর কিছু বলবো না রে,তুই নিজেই গিয়ে দেখে আয়।"
বিলাস একদৌড়ে স্কুলে পৌঁছে গেল।ও তো ভেবে ফেলেছিল যে,ও ফেল করেছে!
কিন্তু স্কুলে গিয়ে দেখলো,বিলাস অনেক ভালো রেজাল্ট করেছে।তখন যে ও কি খুশি হয়েছিল না…!
আর বিলাস কিন্তু প্রথম মিষ্টিটা ধাপ্পাদাকেই খাইয়েছিল!
ধাপ্পাদা জানতো সেদিন বিলাসদের স্কুলে রেজাল্ট দিবে। কিন্তু ধাপ্পাদা দেখলো বিলাস মন খারাপ করে আছে!—অবশ্য তা হবারই কথা।
এর আগে কিন্তু ধাপ্পাদা বিলাসের রেজাল্ট জেনে এসেছিল।কিন্তু এভাবে বললে বিলাস তেমন একটা আনন্দ পেতো না।তাই ধাপ্পাদা তার ট্যালেন্টটা কাজে লাগালো,ধাপ্পা দিল!যার ফলে, বিলাস রেজাল্ট দেখে যত খুশি হতো,তার চেয়ে যেন আরও অনেকগুণ বেশি খুশি হয়!আর মন খারাপের ইতিহাসটা যেন চিরকালের জন্য মুছে যায়।—যেটা আসলেই হলো।
ধাপ্পাদার ধাপ্পার উদ্দেশ্যই এটা—মানুষকে আরও অনেকগুণ বেশি খুশি করা!আর এসব করে ধাপ্পাদাও কম আনন্দ পায় না!
এখন কিন্তু বিলাসও আমাদের মতো ধাপ্পাদার একজন পরম ভক্ত কিংবা শিষ্যও বলা যেতে পারে!
—ধাপ্পাদার গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উপদেশ—
ধাপ্পাদার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ রয়েছে। কিন্তু ধাপ্পাদার শিষ্য হলে এই তিনটি উপদেশ মেনে চলতে হবেই।তাই আমরা এগুলো সবসময় মেনে চলি।
উপদেশ নং ১ঃ ধাপ্পা দিবি,কিন্তু তাতে যাতে কারও কোনো ক্ষতি না হয়!
উপদেশ নং ২ঃ ধাপ্পা দিবি,কিন্তু শেষে,যাকে ধাপ্পাটা দিবি,সে যাতে আরও অনেকবেশি খুশি হয়।
উপদেশ নং ৩ঃ নিজের স্বার্থের জন্য কাউকে কখনোই ধাপ্পা দিবি না।ধাপ্পা দিবি আরেকজনকে অনেক বেশি খুশি করানোর জন্যে।
—প্রিয় মানুষ ধাপ্পাদা—
ধাপ্পাদা যে মানুষকে এত ধাপ্পা দেয়,তাও কিন্তু ধাপ্পাদা সবার অত্যন্ত প্রিয় একজন মানুষ! কারণ,আজ পর্যন্ত ধাপ্পাদার ধাপ্পার জন্য কারও কোনো ক্ষতি হয় নি বরং তারা অনেকবেশি খুশি কিংবা আনন্দিতই হয়!
আর তার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারছি।
মনে হয়,তার শিষ্য হয়ে আমরা কোনো ভুল করিনি—তাই না?
প্রথম মন্তব্য লিখুন
মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে