শুভ্র ও রাইসা


শুভ্র ও রাইসা

বিকাল বেলা বাহিরে মেঘ ডাকছে, গুঢ় গুঢ় শব্দ করছে আকাশ। আচমকা বৃষ্টি শুরু হলো। বারান্দার এক কোনায় বসে গল্প করছে রাইসা আর শুভ্র। সম্পর্কে ভাই বোন, তবুও চমৎকার মিল তাদের। বাবা-মায়ের অতি আদর স্নেহে বেড়ে উঠছে তারা। বয়সের ব্যাবধানটা খুব বেশি নয়, মাত্র ৩ বছর। রাইসা কিছুটা দুষ্টু স্বভাবের মেয়ে, সবার সাথে দুষ্টুমি না করলে তার যেন পেটের ভাত হজম হয় না। গল্পকরতে করতে করতে রাইসা বলে উঠলো,

 

 ‘ভাইয়া! চল তো বৃষ্টিতে ভিজে আসি।’

 

 ‘না, এখন ভিজা যাবে না। জ্বর আসবে।’ 

 

কড়া গলায় বলে দিল শুভ্র। রাইসা রাগী মন নিয়ে উঠে গেল। কিছুক্ষণ বাদে ফিরে এলো একটা বালতি হাতে নিয়ে, তখন শুভ্র একদৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। রাইসা এসে মগ দিয়ে পানি ঢেলে দিলো শুভ্ররের গায়ে। আচমকা পানির আঘাতে ভয় পেয়ে গেলো সে, পরক্ষণেই দেখা গেলো রাইসার খিলখিল হাসি। শুভ্র রাগ হতে না হতেই আলো দৌড়ে চলে গেলো মায়ের রুমে। গিয়েই ‘মা’ কে বলে দিল,

 

 ‘ভাইয়া বৃষ্টিতে গোসল করেছে’। 

 

ততক্ষণে শুভ্র সেখানে হাজির। শুভ্রকে দেখতে পেতেই ‘মা’ বকুনি শুরু করে দিলো। বলছে, 

 

‘বিকাল বেলা বৃষ্টিতে গোসল, জ্বর আসলে বুঝবি। ঠান্ডা লেগে পড়াশুনা মাথায় তুলবি…….ইত্যাদি’।

 

 শুভ্র নিশ্চুপ হয়ে কথা শুনছে, আর রাইসা পাশে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। কিছুক্ষণ মায়ের বকুনি খেয়ে কেটে পড়লো শুভ্র। ভাবলো, ‘আগের যুগ কতই না ভালো ছিলো। গ্রামে এখনো অনেক মজা। ইচ্ছামত কাঁদা মাখামাখি করো, বৃষ্টিতে ভেজো। কেউ বাধা দেয় না।’ তাই তো মাঝে মাঝেই গ্রামের প্রতি আবেগে ভেঙে পরে সে। গ্রামে যেনো আছে প্রকৃত প্রেম, আছে প্রকৃত সোহাগ। তা শহরে পাওয়া যায় না। বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছে শুভ্র। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে গিয়ে সে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠেতেই রাইসা বলে উঠলো,

 

 ‘ভাইয়া নিচে চল। আম্মু ডাকছে।’ 

 

কিছুটা মনমরা ভঙিতে নিচে নেমে এলো শুভ্র। এসে দেখে তার অসংখ্য বন্ধু-বান্ধুবি সেখানে বসে আছে। শুভ্রকে দেখতে পেতেই তারা উল্লাসের সহিত বলতে লাগলো, ‘হ্যাপি বার্থডে শুভ্র, হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।’ কথাটা শুনে শুভ্র বিচলিত হয়ে গেলো, ‘হায় হায়। আমার জন্মদিন তো ✖️✖️✖️। এরা কোত্থুকে উদয় হলো আজ।’ মাথাচুলকানোর ভাব করে সে রাইসার দিকে তাকালো, তখন রাইসার আবার সেই মুচকি হাসি। এই হাসিতেই লুকিয়ে আছে বিশ্বের সেরা দুষ্টুর দুষ্টুমি। শুভ্র বন্ধুদের জন্য খাবারের আয়োজন করে চলে গেলো তার রুমে। গিয়ে ফেসবুকে উঁকিঝুঁকি দিলো, তার শেষ পোষ্ট দেখে সে অবাক। তার শেষ পোষ্ট করা হয়েছে মাত্র দুঘন্টা আগে, যখন সে ঘুমিয়ে ছিলো। পোষ্টে লেখা, ‘আজ আমার জন্মদিন। আমার সকল বন্ধু-বান্ধুবী ও আত্মীয়স্বজনদের বাসা আসার জন্য অনুরোধ করছি।’ 

সে বুঝে গেলো, ‘যখন সে ঘুমিয়ে ছিলো তখনি রাইসা ফেসবুকে পোষ্ট করে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে বাসায় আনিয়েছে। কিন্তু এত সব আয়োজন ও একা এত দ্রুত কিভাবে করলো? এটা ভেবে সে রাইসার উপর বেশ খুশিই হলো, বেচারি অনেক কষ্ট করে এতসব করেছে। তাই আর রাগারাগি করলো না শুভ্র। বাবা-মা বাহিরে গেছেন, সম্ভবত খালার বাসায়। ফিরতে রাত হবে, এই সুযোগে রাইসার এত আয়োজন। কিন্তু বাব-মা দ্রুত ফিরে এলো, রাত ১০ টায় বাসায় ঢুঁকে দেখে, অনেক লোক ভেতরে। শুভ্র এর বাবা একবার বাহিরে গিয়ে দেখেও এলেন, নাহ এটাই তাদের বাসা। তাহলে এত ভির কিসের? এত খাওয়াদাওয়াই বা কে আয়োজন করলো! রাইসা উপর থেকে তার বাবা-মা কে দেখতে পেতেই নিচে দৌড় লাগালো, এসেই বললো, ‘জানো মা, তোমরা যখন বাহিরে গেলা, তখনি ভাইয়া তার বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিলো।’ শুভ্র উপর থেকে সব শুনলো, তবুও প্রতিবাদ করলো না, একটাই তো বোন। তাও মাত্র ১১ বছর বয়স। তার মাথার বুদ্ধি দেখে সে প্রতিনিয়ত অবাক হয়ে যায়। রাইসার মাথা যেন বুদ্ধি দিয়ে ভর্তি। একবার রাঙামাটি পাহাড়ি অঞ্চল বেড়াতে গিয়ে অনেক বড় বিপদ থেকে তারা উদ্ধার পেয়েছিল রাইসার বুদ্ধিতে। তারা পাহাড়ে সেবারই প্রথম, তখন শুভ্র-রাইসা ছোট। শুভ্ররের বয়স ছিল ১২ আর রাইসার ৯ বছর। নতুন এলাকায় এসেই তারা পাহাড় দেখতে গেলো। পাহাড় অনেক বিশাল, পাহাড়ের পাশ দিয়ে অসংখ্য বন্য প্রকৃতির গাছ। তার মধ্য দিয়ে কোনো নির্দিষ্ট পথ নেই, নতুন করে উপরে উঠার পথ বের করে উঠলো তারা। কিন্তু উপরে উঠেই তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেলো। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে। রাইসা অবশ্য ততটা ঘাবড়ায় নি, সত্যিকার অর্থে রাইসা মাথায় বুদ্ধি অনেক, সে বিপদআপদ ততটা ভয় পায় না, ঠিক সে একটা না একটা রাস্তা বানিয়ে বিপদ কেটে এগিয়ে চলে। সবার যখন টেনশনে মুখ চোখ লাল হয়ে গেছে, পেটে অসম্ভব ক্ষুধা, তখন রাইসা বলে উঠলো, ‘বাবা, চলো ফিরে যাই। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে, আমি আর থাকবো না এখানে।’ তখন বাবা সব বললো রাইসাকে, শুনে হো হো করে হাসা শুরু করলো। তখন অবশ্য শুভ্র এর মনে হয়েছিল, মেয়েটা সত্যিই পাগল। না হলে বিপদের সময় কেউ হাসে? কিন্তু রাইসা অনেক চালাক তা একটু পরেই সে বুঝে গেল, রাইসা বাবার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে জিপিএস চালু করে ম্যাপ বের করলো। এর পর চলতে লাগলো নিচের দিকে, পিছন পিছন আসছে শুভ্র ও তার বাবা-মা অবশেষে ৩০ মিনিট পরেই তারা হোটেলে পৌঁছে গেলো। হোটলের দেখা পেয়ে শুভ্র তো বেজায় খুশি, বোনকে আদর করতে করতে সে বাবা-মায়ের সাথে ভিতরে ঢুঁকে পড়লো ।সেই কাহিনী যখন শুভ্র ভাবে, তখনি শুভ্র এর মন হেসে উঠে, হায়রে মাথার কি বুদ্ধি। আজ অবশ্য রাইসা তাকে দুবার দোষারোপ করেছে, এটা করতেও অবশ্য মাথার বুদ্ধি লাগে। রাত ১২ টার পর বাসা যখন ফাঁকা হলো, তখন মা এসে শুভ্রকে আবার বকা শুরু করলো। সে অবশ্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। মায়ের বকুনি শুরু হলো, আর পাশে দাঁড়িয়ে হাঁসছে বোন, সব ঘটনা স্বরন করে নিজের অজান্তেই এক ঝিলিক হেসে ফেললো শুভ্র। 

 

 

 

( ভুলত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন)


অর্পন
Rubaia Islam Rapa
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

প্রথম মন্তব্য লিখুন


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

ভয়

ভয়

ছোট বেলার থেকেই আমি ছিলা...

অদ্ভুতুড়ে

অদ্ভুতুড়ে

কদিন আগে আমি পিসির বাড়ি ...

নীল দ্বীপ  ( পর্ব ৪)

নীল দ্বীপ ( পর্ব ৪)

মৃন্ময় বাসায় এলো।রুমে ঢু...

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

১.ফল্টুদার নামের ইতিকথা—...

বটমূল

বটমূল

ছুটির ঘন্টা পড়ে গেল.......

তুমি অনন্যা  (পর্ব ৫)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৫)

রনি বললো," একটা কবিতা বল...

খাঁটি পাগল

খাঁটি পাগল

বিধূবাবুর কাছে এক পাগল এ...

ছোটগল্প

ছোটগল্প

আমি গল্প লিখি। তবে লেখক ...

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

ইসরাত বললো,"ডিনার করেছেন...

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

তখন আমি ক্লাস 5 এ পড়ি, স...

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে

প্রতিদিন যখন সন্ধ্যা নাম...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

ইসরাত কাছে এসে বললো,"আচ্...

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

মৃন্ময়ের বিয়ের সবকিছু ঠি...

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত লে...

প্রিয় জয়ন্ত স্যার

প্রিয় জয়ন্ত স্যার

তখন সবে হাইস্কুলে উঠেছি।...

করোনা

করোনা

নাম ছিলো তার করোনা। খুব ...

Birthday যখন Foolday!!🎶

Birthday যখন Foolday!!🎶

 Birthday  যখন Foolday🎶...

বন্ধু

বন্ধু

রিজু,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।...

মাথা ব্যাথা

মাথা ব্যাথা

কপালের ডানপাশটা ব্যাথা ক...

চিরকুট

চিরকুট

  এই গল্পটা আমার না।এটা ...