ফল্টুদার পরিচয়পর্ব


ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

১.ফল্টুদার নামের ইতিকথা—

ফল্টুদার আসল নাম পল্টু।কিন্তু পল্টুদা মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন ফল্ট(ভুল) করে থাকে যার জন্য আমরা সবাই তার নাম দিয়েছি—ফল্টুদা!আরেকটা কারণ আছে,ফল্টুদা মাঝে-মাঝে বিভিন্ন ফালতু কাজও করে থাকে,তাই সবমিলিয়ে-ঝিলিয়েই তার নামটা রাখা হয়েছে —ফল্টুদা!


 

২.ফল্টুদার বাচ্চামন—

আমাদের ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেনও ফল্টুদা।সবসময়ই ফল্টুদাই ক্যাপ্টেন থাকে। ফল্টুদা তেমন কিছু খেলা পারে না—তাও আমরা কেন ফল্টুদাকে ক্যাপ্টেন বানাই?

ফল্টুদাকে আমরা ক্যাপ্টেন বানাতে চাই না, ফল্টুদা নিজেই ক্যাপ্টেন হয়,কারণ,ফল্টুদা বয়সে আমাদের থেকে বড় আর ব্যাট-বলও সব ফল্টুদারই কেনা!তাই,ফল্টুদাই জোর করে ক্যাপ্টেন হয়।আর বেশিরভাগ খেলাই আমরা হেরে ফিরি!


 

ফল্টুদার বয়স ২৫-র কম হবে না, আর আমাদের সবারই বয়স ১৬ বছরের আশেপাশে!ফল্টুদাকে যখনই বলি,“ফল্টুদা,তুমি আমাদের চেয়ে বড়,তুমি বড়দের সাথে গিয়ে খেলোনা কেন?”(পল্টুদাকে ফল্টুদা বলে ডাকলে ও কিছু মনে করে না কারণ, এটা শুনতে শুনতে তার অভ্যেস হয়ে গেছে!)

ফল্টুদা বলে,“আরে,তোরা আর বুঝলি না!বয়স বেশি হলেই কি মানুষের মনেরও বয়স বেশি হয়ে যায় নাকি? মন তো ছোটই থাকে রে বোকারা।তোদের সাথে তো আমি খেলিনা,আমার বাচ্চামনটা খেলে!সবারই তাদের বাচ্চামনটাকে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। আর,তোরা তো ছোট—অনেককিছুই বুঝিস না।তাই তোদেরকে বুঝিয়ে দিতে হয়।নাহলে তো,আমার অনেক কাজ—তোদের সাথে খেলার সময় কই?তাও বলি,তোরা ছোট—তোদেরকে আর কে বুঝাবে?সবাই তো সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আমিই নাহয় তোদেরকে শেখাই-বুঝাই—যেটা না বুঝিস।কাজ তো পরেও করা যাবে...”


 

এই পুরো ভাষণটা হজম করতে হবে।আমরা সবাই জানি ফল্টুদার কোনো কাজ নেই। কিন্তু যদি ফল্টুদাকে জিজ্ঞেস করি,“তোমার আবার কিসের কাজ?”তখন আবার কত রকম কাজ যে দেখিয়ে দিবে তার হিসেব নেই! ফল্টুদার কাছে কোনো প্রশ্নের উত্তরই অজানা নেই!


 

৩.ফল্টুদার স্টাইল—

ফল্টুদার স্টাইলটা ভদ্র স্টাইল। কোনো আলতু-ফালতু স্টাইল আবার ফল্টুদা করে না।তা যত ফালতু কাজই করে থাকুক না কেন,স্টাইল ভদ্রই হবে!

চুলগুলো একদম ছোট করে ছেটে রাখে সবসময়।চুল ছোট থাকলে নাকি মাথা ঠান্ডা থাকে—ফল্টুদার মতে।হালকা দাড়ি। চোখে গোল চশমা।হাফ-হাতা শার্ট পড়ে সবসময়। লম্বা জিন্স প্যান্ট পড়ে।ফিতে ওয়ালা স্যান্ডেল।খুব দরকার হলে মাঝেমধ্যে লেইসওয়ালা সু পড়ে।হাতে একটা ঘড়ি সবসময়ই থাকবে—ফল্টুদা কিন্তু আবার টাইমের পাক্কা!


 

৪.ফল্টুদার বাণী ! 

ফল্টুদার বাণীগুলো অনেক কাজের।ফল্টুদা আজ পর্যন্ত আমাদেরকে অনেক বাণী দিয়েছে—দিচ্ছেও।কিন্তু কথা হচ্ছে, ফল্টুদা নিজে কখনো ওই বাণীগুলো মেনে চলেনি!

বাণী তো অনেকগুলো দিয়েছে। তারমধ্যে কয়েকটা বলি আর ফল্টুদা বাণীগুলো কিভাবে মেনে চলে,না চলে বলি—

বাণী ১:অবসর সময় কাটাবি না।

(অথচ ফল্টুদা নিজেই সারাদিন অবসর থাকে!)


 

বাণী ২:নিজের কাজ নিজে করবি।

(অথচ ফল্টুদা নিজের কাজ আমাদেরকে দিয়ে করায়।বড় বলে কিছু বলতেও পারি না!) 


 

বাণী ৩:তর্ক করবি না।

(অথচ ফল্টুদাকে আমরা কিছু সত্যি কথা বললে,তা যদি ফল্টুদার কথার সাথে না মিলে—ফল্টুদা নিজের ওই কথাটা সত্যি প্রমাণ করার জন্য আমাদের সাথে তর্ক করবেই!)


 

বাণী ৪:যেকোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করবি।

(অথচ ফল্টুদা নিজেই কোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করে না!উল্টাপাল্টা কাজ করে বসে থাকে, তাই তো আজ তার নাম পল্টুদা থেকে ফল্টুদা!)


 

বাণী ৫:কারো খুঁত কম ধরবি।

(অথচ ফল্টুদা নিজেই হাজার হাজার খুঁত ধরে—তাও একজনেরই!)


 

বাণী ৬:কথা কম বলবি।

(এই বাণীর ব্যাপারে আমি আর কিছু বলবোই না।না,বলেই ফেলি—ফল্টুদা যে পরিমাণে কথা বলে—যদি কথা বলা নিয়ে কোনো প্রতিযোগিতা থাকতো,তাহলে আমি নিশ্চিত ফল্টুদা এতদিনে কত রেকর্ড যে করতো, তার কোনো হিসেব থাকতো না!)


 

বাণী ৭:কাউকে কম ডপ দিবি আর বড় বড় কথা কম বলবি।

(ফল্টুদার মতো বড় বড় কথা আর কেউ বলতে পারবে না,আর ডপও দিতে পারবে না!—এটা আমার দীর্ঘ বিশ্বাস!)


 

বাণী ৮:ফালতু কাজ করে সময় নষ্ট করবি না।

(এই বিষয়ে আমি আর কিছু বলবোই না!)


 

বাণী ৯:প্রতিদিন একটা রুটিন মেনে চলবি।

(ফল্টুদার রুটিনের তো আমি কোনো ঠিক -ঠিকানা দেখতে পাই না!)


 

বাণী ১০:যে কাজ পারবি না,সেই কাজে যাবি না।

(ফল্টুদা মনে হয়, কোনো কাজই ঠিকমতো পারে না, তাও সবকাজেই যাবে।তার বিনিময়ে তার নামের সুনামটা আরো বেড়ে যায়—"ফল্টুদা!")


 

সব বাণী বলে শেষ করা যাবে না।তাই এটুকুই থাক।আর ফল্টুদা যেভাবে বাণীগুলো মেনে চলে,তা শুনলে মাথা ঠিক থাকবে না!


 

৫.ফল্টুদা কি করে?

আসলে ফল্টুদা কিছুই করে না! ফল্টুদার বাবার যে সম্পদ আছে,তা ফল্টুদা এইজন্মে শেষ করতে পারবে না।তাই ফল্টুদাকে আর কিছু করার দরকার হয় না। তাও ফল্টুদা মাঝে-মাঝে ব্যবসা করে আর...লস খায়!এটাই ফল্টুদার কাজ...লস খাওয়া!


 

৬.ফল্টুদা লস খেলো...

ফল্টুদা তো অনেক বারই ব্যবসা করে লস খেয়েছে! তাও একবারের কথাই বরং বলি—

একবার ফল্টুদা একটা গ্রোসারিজের দোকান দিয়েছিল।তখন ফল্টুদা একটা অফার দিয়েছিল।অফারটা ছিল এরকমঃ❝ আপনি যেই পণ্য ক্রয় করিবেন, ওই পণ্যের সাথে একই আরো তিনটি পণ্য বিনামূল্যে পাইবেন! ❞

এতে নাকি ফল্টুদার অনেক লাভ হবে।অনেক কাস্টমার পাবে।

কিন্তু এরপরে ফল্টুদা যে পরিমাণে লস খেয়েছিল—তারপর দুদিন আর কিছুই খেতে চায়নি!


 

৮.ফল্টুদার আচরণ…

 একটা দিক দিয়েই আমার ফল্টুদাকে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে—ফল্টুদার আচরণ। ফল্টুদা যে বড়লোকের ছেলে,তা বোঝাই যায় না। ফল্টুদার কোনো হিংসা নেই, অহংকার নেই। আর এত সুন্দর করে কথা বলে যে,যেকারো মন খুব সহজেই গলে যাবে!

আর সবসময় মুখে একটা হাসি তো লেগেই আছে!


 

৯.ফল্টুদার ফালতু সমাজসেবা

ফল্টুদার মাথায় যখন সমাজসেবা করবার ভূত চাপে,তখন আমাদেরকেও নিয়ে যায় তার সাথে।

ফল্টুদার সমাজসেবাই মূলত ফল্টুদার ফালতু কাজ!কারণ, না বুঝে-সুঝে ফল্টুদা সমাজসেবা করতে যায়—আর তারপর যে কি হয়, তা একটু পরেই বুঝা যাবে...

ফল্টুদার বিগত দুইটা সমাজসেবার কথা বরং বলি—

সমাজসেবা ১: ফল্টুদা একবার আমাদের পাড়াতে মশার উপদ্রব কমাতে,পাড়ার যত বন-জঙ্গল আছে—তা পরিষ্কার করার দায়িত্ব নেয়।যত অপরিষ্কার জায়গা আছে,তা পরিষ্কার করার দায়িত্ব নেয়।

আর সাথে আমাদেরকেও নিয়েছিল।

এই সমাজসেবা করে ফল্টুদাসহ আমরা সবাই অনেকদিন চিকুনগুনিয়ায় ভুগেছিলাম!


 

সমাজসেবা ২: ফল্টুদা একবার বৃদ্ধ মানুষের কষ্ট কমানোর জন্য —আরেকটা সমাজসেবা করেছিল।

সেটা এরকমঃ বৃদ্ধ মানুষরা যখন বাজার করবে বা কোনো কাজ করবে,তখন তাদের বাজারগুলো বাড়িতে নিয়ে গিয়ে দিয়ে আসতে হবে আর তাদের কাজগুলো করে দিতে হবে।(বেশি ওজন তো আর বৃদ্ধরা বইতে পারবে না, তাই না?)

কিন্তু তখন দেখা গেলো,বৃদ্ধ মানুষের পাশাপাশি কম বয়েসী মানুষরাও আমাদেরকে দিয়ে বাজার বওয়াতো আর কাজ করাতো!

ফল্টুদার সাথে আমরাও গিয়েছিলাম কিনা!ফল্টুদা  বলেছিল,“সবার বাজারই বয়ে নে আর কাজও করে দে,তাহলে সমাজসেবাটা আরো জোরদার হবে—বুঝলি?”


 

কিন্তু এই সমাজসেবা করে পাঁচদিন শরীরব্যথা নিয়ে বিছানা থেকে উঠতে পারি নি!


 

১০.ফল্টুদার ফল্ট!

ফল্টুদা তো এক-দুটি ফল্ট করেনি,তাই সবগুলো মনে রাখা যায় না!

কয়েকটা স্মরণীয় ফল্ট বলি—


 

ফল্ট ১: ফল্টুদা আমাদের ক্যাপ্টেন।(যার জন্য আমরা প্রায়ই খেলা হেরে যাই!এটা অবশ্য নিয়মিত ফল্ট!)


 

ফল্ট ২: ফল্টুদার সমাজসেবা।(সবকিছু বললাম আগেই। এখব আর বলে মাথা খারাপ করবো না!)


 

ফল্ট ৩: ফল্টুদা যখন দাবা খেলার বিচারক। (আমাদের পাড়া আর পশ্চিমপাড়ার মধ্যে একটা দাবা প্রতিযোগিতা হয়েছিল—ছোটখাটো প্রতিযোগিতা আর কি...তাও প্রতিযোগিতা তো?তো,দুই পাড়ার মধ্যে দাবা খেলা কেউ বেশি পারে না—শুধু প্রতিযোগী ছাড়া!ফল্টুদা বললো,ফল্টুদা পারে, ফল্টুদাই বিচারক হবে।কিন্তু আসল কথা, ফল্টুদা দাবা খেলার কিছুই বুঝে না!

তারপর নিয়ম না জেনে, উল্টো-পাল্টা বিচার করার পরে—যা এক কাণ্ড হয়েছিল!...)


 

ফল্ট ৪: ফল্টুদা যখন ঝগড়া মিটিয়ে ছিল।(ফল্টুদা একবার দুজনের ঝগড়া মিটাতে গিয়েছিল।দুজন লোক প্রায় মারামারিই লেগে যাচ্ছিল।তখন ফল্টুদা ঝগড়া থামাতে গিয়ে দুজনের কথাতেই সায় দিচ্ছিল।তারপর ওই দুজন লোক মিলে ফল্টুদাকে যা এক দিয়েছিল না...তা চিরস্মরণীয়!)


 

ফল্ট ৫: ফল্টুদা যখন সাতারু।(আসল কথা,ফল্টুদা সাতারই পারতো না। কিন্তু জোশে হোশ ছিল না ফল্টুদার! কােন দুজনের সাথে জানি তর্ক করে—নিজের সম্মান বাঁচাতে সাতার প্রতিযোগিতা করতে গেছিল!

তারপর কিন্তু,ওই দুজনই ফল্টুদাকে পানি থেকে তোলেছিল!)


 

ফল্টুদার কান্ডকারখানার কথা বলে শেষ করা যাবে না! মহাকাব্য হয়ে যাবে!


 

১১.ফল্টুদাকেই সাপোর্ট করবো…

ফল্টুদা যেমনই হোক।ফল্টুদা সবসময় আমাদেরকে সাপোর্ট করে।আমাদের যা দরকার হয়—এনে দেয়।ভালো-মন্দ অনেককিছুই আমাদেরকে খাওয়ায়।ঘুরাতে নিয়ে যায়।

তারপর ফল্টুদা আমাদেরকে নেতৃত্ব দেয়!(সেটা অন্যকথা যে,তার নেতৃত্বের জন্যেই প্রায়ই অসুবিধেয় পড়ি!)

সবচেয়ে বড় কথা,ফল্টুদা মানুষ হিসেবে অনেক ভালো।আর ফল্টুদা মানুষকে হাসাতে জানে!ফল্টুদা মানুষকে ভালোবাসতে জানে।


 

তাই,ফল্টুদাকেই সবসময় সাপোর্ট করবো আমরা…!


রিদা
Akash
Nipendra Biswas
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

৩টি মন্তব্য

রিদা

রিদা

২ বছর আগে

ফল্টুদা:hehe:🤭🤭

Akash

Akash

২ বছর আগে

মজাদার🤣

Nipendra Biswas

Nipendra Biswas

২ বছর আগে

মজা পেলাম তো!😂


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

নীল দ্বীপ (পর্ব ৭)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৭)

মৃন্ময় বললো,"উনি আমাকে ভ...

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

রনি সেখানে যেয়ে ইসরাতকে ...

~পিল্টু

~পিল্টু

রেলস্টেশনটার পিছনের দিকে...

আসক্ত

আসক্ত

১. আমি ভিডিওগেম আসক্ত। এ...

অনুকথন

অনুকথন

অন্নদার ডাক নাম অনু।অনুর...

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা —ফল্টুদ...

ডাবল জিরো

ডাবল জিরো

অংক পরীক্ষায় একেবারে দুট...

সে.....

সে.....

এক নিমষেই কি সব শেষ হয়? ...

শিকার

শিকার

রাত ১ঃ৩০টা।অমাবস্যার রাত...

তুমি অনন্যা  (পর্ব ৬)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৬)

রনির মন চাচ্ছে আবার দেখা...

মিষ্টি ভালোবাসা

মিষ্টি ভালোবাসা

বউটা আজকে আমার উপর অনেক ...

পাহাড়ের চূড়া

পাহাড়ের চূড়া

             পাহাড়ের চূড়...

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

            তুমি অনন্যা ...

নাম হীন গল্প - শেষের অংশ

নাম হীন গল্প - শেষের অংশ

প্রথম অংশের পর…     তখন ...

প্রতিবিম্ব

প্রতিবিম্ব

আয়নার সামনে বসে নিজেকে দ...

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

মৃন্ময়ের বিয়ের সবকিছু ঠি...

সপ্ন যখন হ য ব র ল

সপ্ন যখন হ য ব র ল

আমি এখন বিয়ে বাড়িতে বাল্...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৩)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৩)

পর্ব ৩:একটু এগুনোর পর শা...

উধাও  || পর্ব -১

উধাও || পর্ব -১

৬৬ সালের মে মাস…. প্রমাণ...

আমি(শেষপর্ব)

আমি(শেষপর্ব)

তখন রাত।বসে আছি।ছাদে যেত...