পাশের বিল্ডিং এর ছাদে...


পাশের বিল্ডিং এর ছাদে...

পাশের বিল্ডিং এর ছাদে...
লেখিকাঃ রোদেলা রিদা 


সিঁথির পড়ার টেবিল জানালার পাশে।  এটাই সিথির সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। এখানেই সিঁথির দিনের বেশিরভাগ সময় কাটে,  জানালা দিয়ে বাহিরের দৃশ্য,  নীল আকাশ,  পাখিদের ঝাঁক বেঁধে উড়া,  মসজিদ,  রাস্তা,  প্রায় সব দেখা যায়।  সন্ধ্যায় যখন আকাশটা কমলা,  লাল বর্নের হয়ে যায়,  মেঘগুলো সাগরের  ঢেউ এর মতে হয়ে যায়,  পাখিগুলো দল বেঁধে নিজেদের ডানা মেলে বাড়ি ফিরে  সিঁথি তার পড়ার টেবিলে বসে  জানালা দিয়ে সেসব দৃশ্য উপভোগ করে।  রাতের বেলা পূর্নিমার হাসি,  তারাদের টিপটিপ সব দেখা যায়  তার জানলা দিয়ে।  সিঁথিদের বিল্ডিংয়ের পাশেই আরেকটা চারতলা বিল্ডিং আছে,  জানালা দিয়ে সেই বিল্ডিং এর  ছাদ দেখা যায়।  একদম পাশেই ছাদটা। সেদিন পূর্নিমার রাতে জানালার পর্দা সরায় দিয়ে সিথি অঙ্ক করছিল আর মুখে গান গুনগুন করছিল।  কিছু সময় পর ঠান্ডা  শীতল বাতাস বইতে থাকে।  সিথি জানলার বাহিরে তাকালো,  আকাশের  চাঁদটা দেখতে দারুণ লাগছিল। তারাগুলোও সেদিন জ্বলজ্বল করছিল।  সিঁথি আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিছুক্ষণ পর সিঁথির চোখ যায় পাশের বাসার সেই ছাদটির দিকে, মনে হলো ছাদের একদম ওই কিনারায় কেউ হয়তো দাঁড়ায় আছে।  সিঁথি  ভালো করে দেখার চেষ্টা করল। তখনই পিছন থেকে সিঁথির বোন তাকে ডাক দেয়, 

- সিঁথি আম্মু খেতে ডাকে! 

সিঁথি  পিছন ফিরে বলে,

- হ্যাঁ আসছি! 

 সিঁথি আবার ছাদটির দিকে তাকালো,  দেখলো কেউ নেই তো! সিঁথি ভাবলো হয়তো তার মনের ভুল। সিঁথি তার অঙ্ক খাতা বন্ধ করে খাইতে চলে গেল। সেদিনের রাতে সিঁথি  আবার ঘুমাবার আগে এসে চেক করলো কেউ সত্যি ছিলো নাকি! না কাউকে আর দেখল না। 

পরেরদিন দুপুরে,  
 সিঁথি তাদের বাসার ছাদে কাপড় মেলতে গেল,  তাদের বিল্ডিং এর ছাদ থেকে  ওই বিল্ডিং এর পুরো ছাদ দেখা যায়।  সিঁথি কাপড় মেলে দেওয়ার সময় খেয়াল করল পাশের বাসার ছাদে  লম্বা ঘন কালো চুল,  হালকা ছাই কালারের জামা পড়া একটা মেয়ে উল্টা  পাশে মুখ করে  দাঁড়িয়ে আছে।  সিঁথি তার মুখ দেখতে পেল না।  সিঁথি কাপড় রেখে ছাদের কিনারায় আসল,  ভালো করে তাকালো মেয়েটির দিকে। মেয়েটি ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে,  তার পাগুলো দেখা যাচ্ছে  না। খোলা  লম্বা ঘন কালো চুল গুলো তার হাওয়ায় উড়ছে।  হঠাৎ সিথির কাঁধে কেউ হাত রাখল,  সিঁথি কিছুটা চমকে উঠল,  পিছনে তাকলো দেখল অথই!( অথই সিঁথির পাশের বাসায়  বান্ধবী) । 

- কিরে ভয় পাইলি নাকি? কি করিস এখানে??

- আরে..না...  ওই যে....

সিথি অথইকে সেই  মেয়েটিকে দেখাইতে যাচ্ছিল,  কিন্তু সেইদিকে তাকিয়ে দেখে মেয়েটি আর নেই! 

- আরে কই গেলো??

- কি কই গেলো??

- মেয়েটা!!

- কোন মেয়েটা??

- এখানে একটা মেয়ে দাড়িয়ে ছিল!  খোলা চুল,  ছাই কালারের জামা পড়া! কই গেলো??

- সে তার বাসায় চলে গিয়েছে হয়তো।

- না....কিন্তু.... এতো তাড়াতাড়ি চলে গেল কিভাবে??

- কি এতে তাড়াতাড়ি চলে গেল? 

- তুই আসার আগে ও ওখানেই দাড়িয়ে ছিল, এখন কই গেলো?

- বলতেছি তো হয়তো ও ওর বাসায় চলে গেছে!

- আরে....তুই বুঝতেছিস না! 

- কি বুঝতেছি না??

- ধ্যাত!!

- হইছে!  এই ভরদুপুরে তুই কি থেকে কি দেখছিস!  চল তো নিচে আম্মু ডাকতেছে!  আজকে দুপুরে তোরা আমাদের বাসায় খাবি! ভুলে গেলি আজকে তো সাবিদের জন্মদিন!  ( সাবিদ অথই এর ভাই)  

- কিন্তু ওখানে....

- কিন্তু ফিন্তু কিছু না! চল তো! 

অথই সিঁথিকে নিচে নিয়ে আসে।  সিথি ভাবে পাচ্ছিল না মেয়েটা কে ছিল! ওভাবে দাঁড়ায় ছিলো কেন!

দুপুরে অথইদের বাসায় খাওয়া করে বাসায় এসে জানালা দিয়ে ওই ছাদে আবার উঁকি মারলো সিঁথি।  কিন্তু সে কাউকে দেখতে পেল না। সিঁথির খুব কৌতুহল হচ্ছিল  কে ছিল মেয়েটা? 

সিথি রাতে পড়ার টেবিলে  আর বসল না। অথইদের বাসায় জন্মদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠান ছিল সেখানে সিথি ছিল। তখন ওর আর সেই মেয়েটার কথা মনে ছিলো না।  সিথি,  অথই,  সাবিদ,  সারা,  ইফতি সবাই ছাদে গেল। রাতের বেলা ছাদে চড়তে সিথিদের ভালো লাগে।  ছাদটা একদম ঠান্ডা থাকে।  তারা ছাদে গোল হয়ে বসল।  
সিথি আর অথই গল্প করতে করতে ছাদের কিনারায় এসে দাঁড়াল। সাবিদ অথইকে ডাক দিলো কোনো কারণে অথই সাবিদের কাছে গেল। সিঁথি আবার সেই ছাদটির দিকে তাকাতেই সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেল। সিঁথি আবার পুরো ছাদটি ভালোভাবে দেখল,  না কাউকে দেখতে পেল না।

সিঁথি হাঁটছে,  কেউ সিথির পিছন পিছন হাঁটছে!  সিঁথি  পিছনে তাকালো শুধুই অন্ধকার!  কেউ নেই! সামনে তাকাতেই এক ভয়ংকর চেহারার মেয়ে!  সিথি ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠল।  চারপাশ তাকালো,  সে বিছানায়,  সিঁথি স্বপ্ন দেখছিল। সে বড় একটা শ্বাস ফেলল!  তার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে,  সে উঠে রান্নাঘর থেকে পানি খেয়ে রুমে আসল।কেমন জানি সিঁথির ভয় ভয় লাগছে! এমন সময় সে এক আর্তনাদ চিৎকার শুনতে পায় সেই ছাদ থেকে! চমকে উঠে সে!ছুটে যায় জানালার কাছে। স্পষ্ট দেখতে পায় এক ছায়ামূর্তি দাড়িয়ে আছে  সেই ছাদের কিনারায়!  মনে হলো  ছায়ামূর্তিটা সিথির দিকে মুখ ফিরল! সিঁথির দিকে তাকিয়ে আছে। সিঁথি  দেখতে পায় তার লাল ভয়ংকর চোখ দুটি!  তার চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছিল। সিঁথি  কি করবে ভেবে পাচ্ছিল না।  সিঁথি দৌড় দিয়ে  এসে  বিছানায় শুয়ে পড়ে।  আয়তুল কুরসি পড়তে থাকে। 

সকালে সিথির ঘুম ভাঙ্গে তার মা-র ডাকে। উঠে বসে চোখ দুটো  মুছতেই সিথির মনে পড়ে যায় রাতের ঘটনাটা! সিথি বুঝতে  পারছিল না সেটি স্বপ্ন ছিলো নাকি বাস্তবেই সত্যিই সেটা ঘটেছে! 
সিঁথি দেখতে পায় তার পানি খাওয়ার গ্লাসটা ড্রেসিং টেবিলের উপর!  হ্যাঁ মনে পড়েছে  সিঁথি রাতে পানি খেয়ে পানির গ্লাসটি ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে জানালার কাছে গিয়েছিল।  তারমানে ঘটনাটা বস্তবে ঘটেছে! সেটা সত্যি ছিল! সিঁথি কি করবে, কাকে এসব বলবে কিছুই বুঝতে পারছিল না! 
 সিঁথি বিছানা থেকে নেমে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়,  ওই ছাদের দিকে তাকায়, সে কাউকেই দেখতে পেল না।  পুরো ছাঁদ ফাঁকা! 

সিঁথি  বিষয়টি কাউকে জানালো না। আর জানালেও বা কি  কেউ তো সিঁথির  কথা বিশ্বাসই করবে না! সিথি ছাদটির দিকে নজর রাখা শুরু করল কিন্তু সে তেমন কিছুই দেখতে পেল না। সন্ধ্যায় তার আম্মু - আব্বু বাহিরে গেল কিছু প্রয়োজনীয় কাজে।বাসায় সে ও তার বোন। তার বোন পাশের রুমে শুয়ে শুয়ে হেডফোন লাগায় গান শুনছিলো, সিথি  তার পড়ার টেবিলে বসে নকশা আকঁছিল। কিছু সময় পর কারেন্ট চলে গেল,  সিঁথিদের  আইপিএস আছে, তাই আর লাইট ফ্যান বন্ধ হলো না। শুধু ড্রিম লাইটটা বন্ধ হয়ে গেল। সিঁথি  পাশের রুমে তার বোন কি করে সেটা দেখতে গেল। সে দেখে তার বোন ঘর অন্ধকার করে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। সিঁথি আপু আপু বলে দুই তিনবার ডাকল,  কোনো সাড়া পেল না মনে হয় ঘুমায় পড়েছে।  সিঁথি  তার রুমে চলে আসল।  আবার সে আর্ট করা শুরু করল। কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে শুনতে পেল পিছন থেকে কেউ তাকে "সি....থি...." বলে ডাকছে! সিথি পিছনে ঘুরল, কিন্তু কাউকে দেখল না।  কিছুক্ষণ পর আবার "সি....থি..." বলে কেউ ডাকলে! সিথি আবার পিছন ঘুরলো কিন্তু কেউই তো নাই!  সিঁথি এতক্ষণ সেই ছাদের  দিকে তাকায় নাই কিন্তু তখন তাকাতেই সে দেখে সেই ছায়ামূর্তি দাঁড়ায়। সেই ছায়ামূর্তিটি সিঁথির দিকে তাকায় আছে,  তার লাল চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে! সিঁথি বুঝতে পারল,  ছায়ামূর্তিটাই তাকে ওভাবে ডাকছে!  সিথি ভয়ে চেয়ার থেকে পড়ে গেল। সিঁথি কি করবে ভেবে না পেয়ে ওয়াশরুমে যেয়ে বেসিনে নিজের মুখ ধুইলো। সিঁথি  শান্ত হলো, তোয়ালা দিয়ে সে নিজের মুখ মুছল। হঠাৎ সে দেখে আয়নায় তার প্রতিবিম্বটি স্থির দাড়িয়ে আছে।  সিথি যা করছে প্রতিবিম্বটি একদম স্থির দাঁড়ায় আছে এবং সিঁথির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকায় আছে!   সিঁথি ভয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসে!  ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার পর লাইট - ফ্যান সব বন্ধ হয়ে যায়। ঘর পুরো অন্ধকার হয়ে যায়। সিঁথি ভয়ে কাঁপতে থাকে। মুখ থেকে তার কোনো কথা বের  হচ্ছিল না। সিঁথি দৌড় দিয়ে রুম থেকে বের হতে চায়  কিন্তু ধাম করে দরজাটা বন্ধ হয়ে যায়। সিঁথি পিছনের দিকে হাঁটতে থাকে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়  সে লক্ষ্য করল  সেই মেয়েটি  লম্বা খোলা চুল,  হালকা ছাই কালারের জামা পড়া!  আয়নায় সিঁথি এবার মেয়েটার  মুখও দেখতে পেল!  ভয়ংকর চেহারা, সিঁথির দিকে তার টকটকে লাল চোখ দুটি দিয়ে তাকিয়ে আছে!  সিঁথি ভয়ে পিছনে এগোতে থাকে,   হুট কটে মেয়েটি আয়না থেকে দৌড় দিয়ে বের হয়ে জানালা ভেঙ্গে ঝাপ মারে! আর একটা জোরে ভয়ংকর আর্তনাদ  চিৎকার হয়। সিঁথি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠে এবং ওখানেই জ্ঞান হারায়! 
পরে তার বোন দরজা খুলে এসে তাকে উদ্ধার করে, তার মা-বাবাও তখন চলে আসে। প্রায় আধাঘন্টা পর তার জ্ঞান  ফিরে।  সে তার মা - বাবা সবাইকে  সব ঘটনা বলে।  পরে হুজুর এসে ঝাড় - ফুক করে দেয়।  কিন্তু সিঁথি এতোটা ভয় পেয়েছিল যে সে প্রায় এক সপ্তাহ জ্বরে  আক্রান্ত ছিল। পরে সে জানতে পারে যে, ওই বিল্ডিং এর একটা বাসায় একটা মেয়ে ছিল। পারিবারিক কিছু অশান্তির কারণে সে সেই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করে। তারপর থেকে অনেকেই তাকে সেই ছাদে ঘুরাফেরা করতে দেখে!  এখনও সিঁথি মাঝে মাঝে সেই ছায়ামূর্তি বা  মেয়েটিকে সেই ছাদে ঘুরাফেরা করতে প্রায়ই দেখে! 


 _________________সমাপ্ত _______________

( পরিশেষে  ভুল - ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)


 


অর্পন
‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎‎
Anik
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

প্রথম মন্তব্য লিখুন


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

সে.....

সে.....

এক নিমষেই কি সব শেষ হয়? ...

বন্ধু

বন্ধু

রিজু,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।...

নীল দ্বীপ (পর্ব ৫)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৫)

মৃন্ময় খেয়াল করে দেখল শু...

আসক্তি

আসক্তি

একটা আসক্তিতে জড়িয়ে আছি!...

নীল দ্বীপ

নীল দ্বীপ

           লেখক :ইসরাত ই...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

ইসরাত কাছে এসে বললো,"আচ্...

আমি (পর্ব৬)

আমি (পর্ব৬)

"না আপু।" "এই সেই পড়বি।গ...

নীল দ্বীপ (পর্ব২)

নীল দ্বীপ (পর্ব২)

ব্রেকফাস্ট শেষে মৃন্ময় ত...

শেষ

শেষ

      ফোন রিং হওয়ার শব্দ...

দৃষ্টিগোচর

দৃষ্টিগোচর

জীবনে অসফল এক ব্যাক্তি আ...

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত লে...

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

মৃন্ময়ের বিয়ের সবকিছু ঠি...

রোহান বিল্লা

রোহান বিল্লা

     রোহান বিল্লা   লেখি...

হাস্যকর এক কাণ্ড

হাস্যকর এক কাণ্ড

কয়েকদিন আগের কথা। আমি যে...

মিষ্টি ভালোবাসা

মিষ্টি ভালোবাসা

বউটা আজকে আমার উপর অনেক ...

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

লেখিকাঃ রোদেলা রিদাএকবার...

টিভিকথন

টিভিকথন

আমাদের ছাদে একটি স্টোররু...

অপেক্ষা

অপেক্ষা

অপেক্ষা, এই জিনিসটা খুব ...

জিহাদ বাবু

জিহাদ বাবু

 হাসি হাসি আর হাসি রিফাহ...

শুভ্র ও রাইসা

শুভ্র ও রাইসা

বিকাল বেলা বাহিরে মেঘ ডা...