মিঠু


মিঠু

 

 

আমি মিঠু। পুরো নাম মিঠু বিশ্বাস। পড়ালেখা করি না। একেবারে যে পড়ি নি তা না—সিক্স পর্যন্ত পড়েছি।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে ছেড়ে দিয়েছি। আমার ফুটফুটে সুন্দর ছোট্ট একটা বোন আছে—নাম পরি।নামটা আমি দিয়েছি,আমার বোনটা ছোট্ট একটা পরির মতো তাই আর কি এই নামটা দেওয়া। 

আমি এখন একটা বড় মুদির দোকানে কাজ করি।নিতে চায়ছিল না আমাকে বয়স কম বলে।আমি অনেক জোরাজুরি করে বললাম, "কিচ্ছু হবে না কাকু দয়া করে আমাকে…… " তখন আমাকে কাজে রাখলো।দিনে ১০০ টাকা দেয়—আমাদের চলতে খুব কষ্ট হয়,কিন্তু চলে যায়।

কত্ত শখ ছিল বোনটাকে কত খেলনা, জামা কাপড়, জুতো কিনে দেব, কিছুই দিতে পারছি না। আমার বোনের বয়স মাত্র ৪বছর।


 

এখন আর খেলতেও পারি না।সারাদিনই তো দোকানে থাকি।সকাল ৭টায় যাই আর সন্ধ্যে ৭টায় আসি।

মা আমার জন্য কাঁদে,বলে,যে বয়সে পড়বার কথা সেই বয়সে কাজ করছে।মা প্রায়ই কেঁদে থাকেন।

আমার আসলে পড়ালেখাতে এমনিও কোনো আগ্রহ ছিল না – কিন্তু কাজ করবারও কোনো ইচ্ছা ছিল না। 

আমার খেলতে খুব ভালো লাগতো।আমি ক্রিকেট,ফুটবল,ডাংগুলি,ব্যাডমিন্টন,ভলি বল খেলতাম।আমি ফুটবল দিয়েই ভলি বল খেলতাম। 

আমার ক্রিকেট খেলতে সবচেয়ে ভালো লাগতো।আসলে ক্রিকেটই বেশি পারতাম।অন্য খেলাগুলো বেশি পারতাম না। আমার স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হবো আর আজ আমি মুদির দোকানে কাজ করছি!


 

ভাবছি এই কাজটা ছেড়ে দিব আর একটু বড় হলে অন্য কোনো কাজ শিখে নেব।টাকাও বেশি পাব হয়তো।

দীপু,সীমা,নীল,আদি ওরা আমার বন্ধু—একসাথেই পড়তাম।ওরা এখন এইটে পড়ে।আদি আমার প্রিয় বন্ধু-আমরা ক্লাস ত্রি থেকে একসাথে পড়তাম।

ওর সাথে দেখা হয়,ও মাঝে মাঝে আমাদের বাড়িতে আসে—অন্যদের সাথে দেখা হয় না। আদির বাবা বড় একজন ব্যবসায়ী।আমাকে খুব আদর করতেন।আদি একবার বলেছিল আমাকে, আমি যাতে পড়ালেখা আবার করি,সব খরচ আদির বাবা দিবেন আর আমার পরিবারের খরচও তিনি দিবেন।

কিন্তু আমি আদিকে না বলে দিলাম,কারণ আমি কারো ভোঝা হতে চাইনি।


 

আমি একদিন না একদিন বড় ব্যবসা করবো।নিজেদের বড় একটা বাড়ি বানাবো।মাকে,বোনকে নিয়ে একসাথে ওই বাড়িতে থাকবো।

এখন একটু কষ্ট করতে হবে—আস্তে আস্তে সব হবে।আমার বাবা বলতো,"মিঠু মনে রাখবি মানুষের সময় সবসময় এক থাকে না,যদি তোকে কষ্ট করতে হয় করবি কিন্তু ভেঙে পড়বি না, দুঃখ পাবি না, সমসময় হাসিখুশি থাকবি আর মনে মনে নিজেকেই বলবি এইসময়টাও কেটে যাবে।"


 

আমি সবসময় হাসিখুশি থাকি।আমার কোন দুঃখ নেই। আমি তো ভালোই আছি—হয়তো সবদিন ভালো কিছু খেতে পারি না কিন্তু যা-ই খাই খেতে তো পারছি।অনেকে তো কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। সবদিন খেতে পায় না, রাতে না খেয়ে ঘুমোতে হয় বা আধপেট খেয়ে থাকতে হয়।সেই তুলনায় অনেক ভালো আছি আমি।আমি প্রতিদিন পেটভরে তিনবেলা খেতে পারলেই চলবে আর মা আর বোনকে খাওয়াতে পারলেই চলবে। 


 

আমার বেতন এখন বাড়িয়েছে ৫০ টাকা দিনে।আমি কাজ করছি দুবছর ধরে আর আমি মালিকের সব কথা শুনি,দোকানের সব কাজ করতে পারি। আমি আজ পর্যন্ত কোনদিন কাজে ফাঁকি দেইনি।একদিন ছুটিও নেইনি।যদি একদিন কাজ না করি তাহলে একদিনের টাকাটা পাবো না। আসলে আমি দিনের হিসেবে টাকা নেই, প্রতিদিনেরটা প্রতিদিন—চাকরির প্রথম দিন থেকেই। কারণ, প্রথম প্রথম আমার হাতে কোনো টাকা ছিল না, তাই আমি কোত্থেকে মাস হবার আগে মা আর বোনকে খাওয়াতাম।এখনও আমি এইভাবেই টাকা নিই। 

আমি এখন আবার আমার টাকাটা থেকে ৫-১০ টাকা প্রতিদিন জমাই।কোনসময় এই জমানো টাকাটা দিয়ে আমি বোনকে কিছু কিনে দিতে পারবো বা আমরা সবাই ভালো কিছু খেতে পারবো। 


 

যেভাবে চলছে চলুক—ভালোই তো আছি। 

আমি বড় হয়ে আর কিছু করি না করি বড় মুদির দোকান একটা খুলবো।আর আমার এই কষ্টের সময়টা সবসময় থাকবে নাকি। এই সময়টাও কেটে যাবে।




 


Anik
Sandeep Roy
Nipendra Biswas
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

২টি মন্তব্য

Anik

Anik

৩ বছর আগে

পড়ে ভালো লাগল। আশাকরি মিঠুর স্বপ্ন পূরণ হবে। 😌

Nipendra Biswas

Nipendra Biswas

৩ বছর আগে

খুবই ইমোশনাল😔


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

কেমন আছো তুমি

কেমন আছো তুমি

 নিলিকে আমি আমার মনের কথ...

পথশিশু

পথশিশু

লাবণ্য,  একজন পথশিশু। পথ...

আমি (পর্ব৬)

আমি (পর্ব৬)

"না আপু।" "এই সেই পড়বি।গ...

চিঠি

চিঠি

রহস্যময়, জানি চিঠিটি আপন...

নীল দ্বীপ (পর্ব ৭)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৭)

মৃন্ময় বললো,"উনি আমাকে ভ...

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

            তুমি অনন্যা ...

শিকার

শিকার

রাত ১ঃ৩০টা।অমাবস্যার রাত...

নিদ্রাহীন

নিদ্রাহীন

রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে...

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

তখন আমি ক্লাস 5 এ পড়ি, স...

কে ছিল???

কে ছিল???

আমি আগে ৯ -১০ টার মধ্যেই...

উধাও ||  পর্ব - ২

উধাও || পর্ব - ২

পর্ব একের পর … রামিম একজ...

পড়ন্ত বিকেলে...

পড়ন্ত বিকেলে...

পড়ন্ত বিকেলে...সারাদিন ঝ...

করোনা

করোনা

নাম ছিলো তার করোনা। খুব ...

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

মৃন্ময়ের বিয়ের সবকিছু ঠি...

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

১.সুবিমলবাবু অনেকদিন পর ...

টিভিকথন

টিভিকথন

আমাদের ছাদে একটি স্টোররু...

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে

প্রতিদিন যখন সন্ধ্যা নাম...

অদ্ভুত-উদ্ভট

অদ্ভুত-উদ্ভট

এ কোথায় এলাম আমি?হঠাৎ দে...

কুলফিওয়ালা

কুলফিওয়ালা

কুলফি খেতে ভীষণ ভালোবাসে...

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা —ফল্টুদ...