অমাবস্যার রাত


অমাবস্যার রাত

গল্পটা খুব আগের না এইতো এই পূর্ণিমাতে হবে ৭ দিন। অমাবস্যার রাত..  আমি একা.. এমনি একালাই রাতে বাড়ি ফিরি। সেদিনো এর ব্যাতিক্রম হয়নি।


ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে বাড়ির দিকে আসছি।মেঠো রাস্তা..  দুই ধারে বেশ আগাছা জন্মে ঘিরে রেখেছে।  আর তার পাশের বড় ঝোপ তাতে এক ভুতুরে নাটকীয়তা যোগ করেছে।টর্চের আলো খুব বেশি হচ্ছিলো না। কোনো রকমে নিচের রাস্তাটা দেখা যায়।ধীরে ধীরে দেখে হাটার বদলে আমি একটু পা চালিয়ে হাটছিলাম।  সাপে কাটার কোনো ভয় মনের মধ্যে ছিলোনা। বাড়ির কাছে আসতেই হঠাৎ একটা প্রকান্ড কড়ই গাছ মরমর করে ভেঙে পরলো। শব্দে আমি দাঁড়িয়ে পরলাম।  আমি যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম সেখান থেকে হাত দুইয়েক উত্তরে গাছটি পরেছে। এখানে যে এখন জঙ্গল হয়েছে সেটা বছর ৩০ আগেও ছিলো না..  এখানে ছিলো একদম ফাকা জায়গা।। তবে এটা শ্মশান ছিলো।  গ্রামের সব মরা এখানেই পুরানো হতো একসময়। গাছটা যেখানে ভেঙ্গে পরেছে সেখান থেকে বার থেকে কুড়ি কিংবা ত্রিশ হাত দূরেই মা কালীর মন্দির।

সুঠাম দেহী এক মায়াবী দেবী এক হাতে খর্গ আরেক হাতে কাটা মস্তক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার দুই পাশে নাগিনী যুগিনী।  মুখের কোন দিয়ে রক্ত পরছে। হঠাৎ কেও দেখলে হয়তো ভয় পেয়ে যাবে।  কিন্তু আমি তো রোজ দেখি আমার আবার ভয় কি। গাছ পরাতে একটু চমকে গিয়েছিলাম। আমি আবার হাটতে শুরু করলাম। এবার একটু সাবধানে।  প্রকান্ড গাছ ভেঙ্গে পরেছে।  আশে পাশের ঝোপে থাকা সাপ গুলো হয়তো এখন সেখান থেকে বের হবে। ভুতে ভয় না থাকলেও চমকে যাওয়ার ভয় আছে আমার। সামনে এসে কোনো কিছু চমকে দিলে আমার ভয় লাগে। অনেকদিন আগে আমি আর আমার এক প্রতবেশি যাচ্ছি হঠাৎ সে বলে সাপ আমি নিজে দেখিনি কিন্তু খুব চমকে উঠেছিলাম।  এরপর দেখি একটা ডোরা সাপ। নাই বিষ কিন্তু সর্পকুলে জন্ম বলে কতই না ভয় পাওয়া। অমাবস্যা বলে ঝোপের মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলামনা। 


আমি ভাবছি উপড়ে পরা গাছটাকে একটু দেখে আসি। আর ভাবার সাথে সাথেই চলে গেলাম দেখতে।  দেখলাম গাছ পরে আছে। ভাবছিলাম আশেপাশে কেও থাকবে যে এটাকে কেঁটেছে। আর হলোও তাই।  দুইজন লোক গাছের পাশ থেকে বের হয়ে আসলো।  একজনের হাতে প্রকান্ড এক কুঠার। মুখ গুলো পরিচিত না।  তবে আমাকে নাম ধরে ডাকলো।  যেনো তারা বুঝেছে আমি চমকে গেছি।  "কিরে অনিক চমকাইছত?"। আমি বললাম "না"। এর মধ্যে একজন গাছটা অন্য পাশে গিয়ে একটা বড় দা নিয়ে এলো। কিন্তু গাছ কাটতে যারা আসে তারা এমন বড় দা আনে না। 


আমার সন্দেহ হচ্ছিলো। পা কাপছিলো।  আর কপালের দিকে ঘাম জমছিলো। আমি কিছু বলবো তার আগেই কুঠার হাতে রাখা লোকটা বলে উঠলো "হাত পা কাটতে হলে বড় দা টাই লাগে এই কুঠার দিয়ে কিছু হয় না । এটা ভারি কতক্ষন আর কুপানো যায়??" আমি ভয় চেপে রেখে আমতা আমতা করে বললাম। "গাছ থাকতে কার হাত-পা কাটবেন?"। দা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা বললো " আরে গাছের হাত পাই তো..  অইযে দেখাই বড় ডাল দুইটা হাত" আমি এবার পরে থাকা গাছের দিকে তাকালাম।  কিন্তু একি এখানে গাছ নেই পরে আছে একটা ব্যাক্তি। আর হাতে দা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা এগিয়ে যাচ্ছে তার দিকে। 


লোকটা তার কাছে গিয়েই গলা আর ডান হাতের মাঝখানে দা-টা দিয়ে এক কুব বসিয়ে দিলো। অন্ধকারে লাল রক্ত কালো দেখাচ্ছে।  আমার ফোনের টর্চে লোকটার মুখও ঠিক ভাবে দেখা যাচ্ছে না। এর পর একাধারে আরো কয়েকটা কুপ দিয়ে আলাদা করে নিলো ডান হাতটা।  কুঠার হাতে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটা ডান হাতটা নিয়ে আরো ভাগ করলো। যেভাবে চ্যালা কাঠকে ভাগ করা হয়.... ঠিক সেই ভাবে..আমি তখন সহ্যের ঠিক শেষ প্রান্তে চলে এসেছি।  চোখে ঠিক ভাবে দেখছি না। চোখ বন্ধ হওয়ার আগে দেখলাম কুঠার হাতে লোকটি, পরে থাকা মানুষটির মাথায় কুঠার দিয়ে আঘাত করলো।



এরপর যখন উঠলাম পিঠের দিকটায় মশার কামরে ফুলে উঠেছিলো। মনে ছিলোনা আগের ঘটনা। সেখানে বসে বেশ কিছুক্ষন ভেবেছিলাম কেনো সেখানে পরে আছি। কিন্তু তখন আর আমার কিছু মনে পরেনি। আমি উঠে গায়ের থেকে ময়লা ঝেরে বাড়ির দিকে রওনা হলাম।এরপর কিছুদূর আসতেই মরমর শব্দে একটা গাছ ভেঙ্গে পরলো। আমি একটু চমকে গেলাম এবং দাঁড়ালাম...



রিদা
সিকন
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

২টি মন্তব্য

রিদা

রিদা

৩ বছর আগে

😨😨nice

Anik

Anik

এক বছর আগে

@rida ধন্যবাদ...


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

হাস্যকর এক কাণ্ড

হাস্যকর এক কাণ্ড

কয়েকদিন আগের কথা। আমি যে...

নীল দ্বীপ (পর্ব২)

নীল দ্বীপ (পর্ব২)

ব্রেকফাস্ট শেষে মৃন্ময় ত...

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

মৃন্ময়ের বিয়ের সবকিছু ঠি...

নিদ্রাহীন

নিদ্রাহীন

রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে...

আমি (পর্ব৫)

আমি (পর্ব৫)

বিচিত্র পৃথিবীর মাঝে বেঁ...

অর্পন

অর্পন

ভোরের সূর্য উঠার ঠিক আগ ...

অপেক্ষা

অপেক্ষা

অপেক্ষা, এই জিনিসটা খুব ...

রোহান বিল্লা

রোহান বিল্লা

     রোহান বিল্লা   লেখি...

আমি (পর্ব২)

আমি (পর্ব২)

আজ পূর্ণিমা রাত।ছাদে একা...

নীল দ্বীপ

নীল দ্বীপ

           লেখক :ইসরাত ই...

নীল দ্বীপ  ( পর্ব ৪)

নীল দ্বীপ ( পর্ব ৪)

মৃন্ময় বাসায় এলো।রুমে ঢু...

তুমি অনন্যা

তুমি অনন্যা

তুমি অনন্যা লেখক:ইসরাত ই...

আমি (পর্ব৬)

আমি (পর্ব৬)

"না আপু।" "এই সেই পড়বি।গ...

মিঠু

মিঠু

  আমি মিঠু। পুরো নাম মিঠ...

ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর  বাড়িতে কয়েকদি...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

ইসরাত কাছে এসে বললো,"আচ্...

শিকার

শিকার

রাত ১ঃ৩০টা।অমাবস্যার রাত...

কুলফিওয়ালা

কুলফিওয়ালা

কুলফি খেতে ভীষণ ভালোবাসে...

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

লেখিকাঃ রোদেলা রিদাএকবার...

দৃষ্টিগোচর

দৃষ্টিগোচর

জীবনে অসফল এক ব্যাক্তি আ...