কয়েকদিন হাসপাতালে


কয়েকদিন হাসপাতালে

একবার আমার কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার দূর্ভাগ্য হয়েছিল!উল্টোপাল্টা অষুধ খেয়ে আমার অবস্থা নাজেহাল। 

সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠতেই-উঠতে পেটে কেমন গুড় গুড় করছিল। তখন আমি মামার বাড়িতে ছিলাম—বেড়াতে গিয়েছিলাম।মাকে বলার পর মা বললো, মামাকে জিজ্ঞেস করে একটা অষুধ খেয়ে নিতে। 

মামা একজন ডাক্তার, উনার কাছে সবসময় একটা বাক্সে মোটামুটি সবধরণের অষুধ থাকে। তো মায়ের কথামতো মামার কাছে গেলাম, মামা আমাকে একটা অষুধ দিল খাবার জন্য।অষুধটি খেতে হবে ভরা পেটে, আমি খেয়েনিয়েছিলাম খালিপেটে।মামা এতকিছু জিজ্ঞেস করেননি,আমি ঘুম থেকে উঠেছি সকাল ১০টার পর, উনি মনে করেছেন এত বেলা হয়েছে কিছু তো নিশ্চয় খেয়েছে।আর সেদিন মামি বাসাতে না থাকায় মা রান্নাঘরে মামার জন্য নাস্তা বানাচ্ছিল।আর আমিও ঘুম থেকে উঠেছি এতকিছু খেয়াল নেই, আর বার বার বাথরুমে যেতে যেতে অবস্থা খারাপ!তো খেয়ে নিলাম অষুধ।


 

আর ১০ মিনিটের মধ্যে 'রিয়েকশনের অ্যাকশন' শুরু। 

মামার বাসার পাশে আমার এক বোনের বাসা।মামা বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে,আমি আর মা আমার বোনের বাসাতে যাচ্ছিলাম। প্রথম প্রথম আমার কিছু হয়নি, কিন্তু রাস্তায় হাঁটার সময় চোখদুটো আস্তে আস্তে ঝিম ঝিম করছিল। তারপর শুরু হলো মাথাব্যথা—প্রচণ্ড মাথাব্যথা,এমন মাথাব্যথা আমার জীবনেও হয়নি।এরপর থেকে শুরু হলো বমি…….


 

বার বার বমি করছিলাম বলে মা আমার মাথাটা ধুইয়ে দিলো। আর এমন অসহ্যনীয় মাথাব্যথা কোনোভাবেই কমছিল না—বাম লাগালেও কোনো পরিবর্তন হয়নি,আমি কিছু টের করতে পারছিলাম না।

আমি মাকে কিছু বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমি কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলাম না, আবোল-তাবোল বলছিলাম।আমার হাত পাও খিচুনি ধরে গেছিল,মা একবার আমার হাতের তালু একবার পায়ের তালু ঘষছিল। 

আমার ভাগনে বাঁধন যে সারাদিন শুধু দুষ্টুমি করে বেড়ায়,সেও সেদিন আমার এই অবস্থা দেখে চুপচাপ আমার কাছে বসে আমার মাথা টিপছিল। 

আমার বোন পার্বতী দি আমার এই অবস্থা দেখে দাদাবাবুকে ফোন করে বললো,ফার্মেসী থেকে আমার জন্য বমির আর মাথাব্যথার অষুধ আনতে। দাদাবাবু অষুধ আনলো কিন্তু আমি খেলাম না। কারণ,ততক্ষণে আমার অবস্থা আরো খারাপ হতে শুরু করেছে।তখন মা মামাকে ফোন করে সব বলার পর মামা বললো, আমাকে পেট ভরে ভাত খেয়ে শুয়ে থাকতে। আমার প্রচণ্ড মাথাব্যথা হচ্ছিল বার বার বমি করছিলাম আমি কিভাবে পেট ভরে ভাত খেতাম!তারপর মা মামাকে আবার ফোন করে বললো। মামা বুঝে গেছিল যে আমার অবস্থা খারাপ। তখন মামা বললো, আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করাতে।

দাদাবাবু আবার গিয়ে একটা রিকশা নিয়ে এলো।

আমি মার কাঁধে ঘাড় ফেলে কিভাবে রিকশা পর্যন্ত হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি নিজেও জানি না। মা তো ওখানের বেশি কিছু চিনে না। তাই দাদাবাবু আমাদের সাথে গেলো।

হাসপাতালে গিয়ে আমাদের বাড়ির একজন লোককে পেলাম,উনি এই হাসপাতালের ডাক্তার। তাতে কিছু সুবিধে হলো—এত ভিড়ের মধ্যেও ডাক্তারের সিরিয়াল পেয়ে গেলাম।হাসপাতালে গিয়েও আমি ২-৩বার বমি করেছিলাম।আমার তখন একটু অজ্ঞান-অজ্ঞান ভাব ছিল।একবার কিছুক্ষণের জন্য অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিলাম আবার জেগে উঠছিলাম।

দেখলাম একজন নার্স আমার এক হাতের শিরায় ইনজেকশন দিয়ে অন্য হাতে একটা নল লাগালো তারপর ঐ নলটায় আরেকটা ইনজেকশন দিলো।

তারপর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলো বেড খালি ছিল না,কোনো কেবিনও খালি ছিল না।  তখন আমার জীবনের সবচেয়ে মুমূর্ষু মুহূর্ত ছিল।মার কাঁধে ঘাড় ফেলে দাঁড়িয়ে রইলাম কতক্ষণ। আমার মা আমাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।একটা বেড খালি হওয়ার পর আমাকে নিয়ে বেডে বসানো হলো।আমার হাতে একটা পলিথিন দিয়েছিল—আমি ওইটার ভেতর মুখ ঢুকিয়ে বমি করলাম একটু।সকাল থেকে কিছু না খাওয়ায় শুধু পানি বের হচ্ছিল। তারপর আমি মার কোলে মাথা রেখে অজ্ঞানের মতো হয়ে গেছিলাম। 


 

চোখ মেলে আমি বুঝতে পারছিলাম না যে আমি কোথায়। আমি মাকে জিজ্ঞেসও করলাম ফিল্মের মতো করে, 'মা কোথায় আমি?'একটু হাস্যকর কিন্তু সত্যি এটাই হয়েছিল।

কিছুক্ষণ পরে আমি আবিষ্কার করলাম আমি হাসপাতালের একটা বেডে শুয়ে আছি।আমার হাতে স্যালাইন লাগানো।


 

এর আগের কিছু আমার মনে নেই। বোধহয় সকাল ১১টার সময় হাসপাতালে গিয়েছিলাম আর আমার ঘুম ভেঙেছিল ৪:৩০–৫টার সময়।তখনও আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে ছিলাম। 


 

তখন আমার একটু আরাম লাগছিল। বমির ভাবও নেই,হাত-পা খিচুনি নেই, কথা বলতে পারছিলাম ঠিকমতো।অবশ্য মাথাব্যথা একটু ছিল।তারপরও তখন আমার মনে হয়েছে আমি যেন স্বর্গীয় সুখ পেয়েছি।

কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম রুমটা বেশ বড়,অনেকগুলো বেড।রুমটার শেষের দিকে বড় বড় অক্ষরে লেখা "ডায়রিয়া ওয়ার্ড"। তার মানে আমাকে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয়েছে।এই ওয়ার্ডে বেশিরভাগ বাচ্চা আর বয়স্ক মানুষ। বাচ্চাদের চেল্লাচিল্লিও তখন আমার মধুর মতো লাগছিল। 


 

আমার বাবা বাড়ি থেকে ওইখানে এলো  আমাকে দেখতে। মামাও দেখতে এলো।আমার আন্টিও আমাকে দেখতে এলো।


 

আমার শরীর খুব দূর্বল ছিল দুদিন পর্যন্ত। ডাক্তার প্রতিদিন এসে ওই নলটায় ইনজেকশন দিতেন।খুব ব্যথা করতো,শিরা ফুঁলে উঠতো,অথচ সেদিন আমি কোনো ব্যথা টের-ই পাইনি।হাসপাতালটার কয়েকজন নার্স ছিলেন হাসিমুখো আবার কয়েকজন ছিলেন পুরোপুরি গম্ভীরমুখো।

দুদিনপরে আমার বাচ্চাদের চেল্লাচিল্লি খুব বিরক্ত লাগতো।তারপর হাসপাতালে কেমন জানি একটা গন্ধ করতো।কোনো কেবিন খালি না থাকায় ওইখানেই থাকতে হলো।আমার জন্য মারও ওইখানে থাকতে হলো।

আমি সেদিন যন্ত্রণার মাঝেও মার চোখের জল লক্ষ্য করেছিলাম।


 

" ভগবান সবখানে থাকতে পারেন না

 তাই হয়তো মা বানিয়েছেন "


 

৫দিন হাসপাতালে কাটানোর পর বাড়ি ফিরেছিলাম।

সেদিন হয়তো আর একটু দেরি হলে আমি মারা যেতে পারতাম।খুবই খারাপ অবস্থা হয়েছিল আমার।






 


Nipendra Biswas
Akash
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

প্রথম মন্তব্য লিখুন


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

ধাপ্পাবাজ বাপ্পা অথবা ধাপ্পাদা

ধাপ্পাবাজ বাপ্পা অথবা ধাপ্পাদা

—বাপ্পাদার নাম যেভাবে ধা...

~পিল্টু

~পিল্টু

রেলস্টেশনটার পিছনের দিকে...

কয়েকদিন হাসপাতালে

কয়েকদিন হাসপাতালে

একবার আমার কয়েকদিন হাসপা...

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

ইসরাত বললো,"ডিনার করেছেন...

সব পেশাই কি সমান???

সব পেশাই কি সমান???

সবাই বলে সব পেশাই সমান!স...

শিকার

শিকার

রাত ১ঃ৩০টা।অমাবস্যার রাত...

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

লেখিকাঃ রোদেলা রিদাএকবার...

আসক্ত

আসক্ত

১. আমি ভিডিওগেম আসক্ত। এ...

চিঠি

চিঠি

রহস্যময়, জানি চিঠিটি আপন...

হ্যাবলা

হ্যাবলা

গ্রামের নাম পলাশপুর।গ্রা...

শেষ

শেষ

      ফোন রিং হওয়ার শব্দ...

সে.....

সে.....

এক নিমষেই কি সব শেষ হয়? ...

ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর  বাড়িতে কয়েকদি...

প্রিয় জয়ন্ত স্যার

প্রিয় জয়ন্ত স্যার

তখন সবে হাইস্কুলে উঠেছি।...

প্রিয় মা

প্রিয় মা

  প্রিয় মা,কেমন আছো তুমি...

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত লে...

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

            তুমি অনন্যা ...

উধাও  || পর্ব -১

উধাও || পর্ব -১

৬৬ সালের মে মাস…. প্রমাণ...

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

❝বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ ...

রিক্সাচালক

রিক্সাচালক

প্রখর রোদে দাড়িয়ে আছে আয়...