অনুকথন


অনুকথন

অন্নদার ডাক নাম অনু।অনুর বাবা-মা মারা গেছে সে ছোট থাকতেই,একটি রোড-এক্সিডেন্টে।সেসময় থেকে সে তার কাকু -কাকিমার সাথে তাদের বাড়িতে থাকে।তার কাকু তাকে আদর করে,কিন্তু তার কাকিমা অনুকে বেশি ভালো পায়না।অনু তাদের বাড়িতে থাকে খায়-পড়ে। তো কিছু কাজ করে তো তার কাকিমাকে সাহায্য করতে হবে।

কিন্তু অনু কানেও কম শোনে,কথা বলতেও পারে না-সমস্যা হয়।তবে তার মন খুব ভালো।সে তার কাকু-কাকিমাকে অনেক ভালোবাসে।অনু পড়তে চায়,কিন্তু তার কাকু-কাকিমা বলে যে,তাকে খাওয়াচ্ছে-বড় করছে।সে-ই অনেক আর পড়তে হবে না।কিন্তু তার বাবা-মা বেঁচে থাকলে কত্তো খুশি হয়ে অনুকে পড়াশোনা করাতো।অনুদের সম্পত্তি তো অনেক,তা ভোগ করছে তার কাকু-কাকিমা। অনু এসব কিছু বোঝে না,তারপরও একটু-আধটু হলেও বোঝতো,যদি সে অসুস্থ না হতো। তার এসব নিয়ে তেমন মাথাব্যথাও ছিল না।অনু অসুস্থ ছিল না-ভালোই ছিল।অনুর বয়স তখন তিন কি চার বছর,এমন সময় তার টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল।ভগবানের আশির্বাদে জ্বর তো সেরে গেল,কিন্তু এরপর থেকেই অনু কানে শোনে না-তখন তার বাবা-মা বেঁচে ছিল।অনুকে ডাক্তার দেখানোর পর,ডাক্তার বলেছিল,অনুর যখন ১০বছর বয়স হবে-তার কানের অপারেশন করাতে হবে।

অনুর যখন ৫বছর বয়স তার বাবা-মা মারা গেছে।তার বয়স এখন ১১বছর-এখনো তার কানের অপারেশন করানো হয়নি।অনু এতদিনে সুস্থ হয়ে যেতো,যদি তার বাবা-মা বেঁচে থাকতো।অনু কথাও বলতে পারে না-সমস্যা হয়,তাও বোধহয় টাইফয়েড জ্বরের কারণেই হয়েছে। অনু ছোট থাকতে তার বাবা-মা বোঝতে পারেনি, তারা মনে করতো অনু তো ছোট তাই বোধহয় কথা বলতে পারছে না,বড় হলে পারবে।কিন্তু সে বড় হয়েও কথা বলতে পারে না,কথা বলতে গেলে সমস্যা হয়।তার কাকু-কাকিমা বুঝতে পেরেও অনুর কোনো চিকিৎসা করায় নি।অনুকে অনেক বকা-ঝকা করে তার কাকিমা।তার কাকা আবার তাকে বেশি বকা-ঝকা করে না।তার কাকিমা তাকে বকা-ঝকা করে কারণ,তার কাকিমা যদি অনুকে কিছু বলে সে শুনতে পায় না।আবার অনুও তার কাকিমাকে কিছু বুঝিয়ে বলতে পারে না।অনু এসব বকা-ঝকা শুনতে পায় না,কিন্তু মুখের ধরন দেখে সব বুঝে যায়।তবু সে কিছু মনে করে না,সে মনে মনে ভাবে,গুরুজনরা বকা-ঝকা করলে কিছু হয়না।আবার অনুকে যদি কোনোকিছু ঈশারা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়,তাহলে সে সবকিছু খুব সুন্দরভাবে বুঝে যায়।সেও ঈশারা দিয়ে সবকিছু বুঝিয়ে দিতে পারে।কিন্তু অনেক সময় তার কথা বলতে ইচ্ছে করে তাই সে কথা-বলে বোঝাতে চায়।আর তখনই অনুকে বকা খেতে হয়।অনুর অনেকগুলো বন্ধু আছে,তাদের সাথে সে অনেক কথা বলে।তার কাকু গাড়ির ড্রাইভার,সকালে যান সন্ধ্যায় আসেন।তো,দুপুরবেলা যখন তার কাকিমা ঘুমিয়ে থাকেন,তখন সে চুপি-চুপি ঘর থেকে বের হয়ে বাড়ির মাঝখানে একটি নিমগাছ আছে,সেখানে বসে সে পিঁপড়াদের সাথে বসে খেলা করে । নিমগাছটির নিচে একটি পিঁপড়াদের ঢিপি আছে,সেখান থেকে পিঁপড়াদের অনেক বড় সারি সরু হয়ে যায় খাবারের খোঁজে।অনু এই ঘটনা গুলো দেখে খুব আনন্দ পায়। কিছুক্ষণ সেখানে বসে, সে চলে যায় তার পাখি বন্ধুদেরকে বিস্কিট খাওয়াতে।অনু তার কাকিমা যাতে না দেখে সেইভাবে,রান্নাঘর থেকে বিস্কিটের কৌটো থেকে একটা বিস্কিট এনে বিস্কিটটা একটু-একটু করে ভেঙে ভেঙে উঠোনের মাটিতে ফেলে দেয় , নিমগাছের ডালে বসা পাখিরা তখন তা দেখে উড়ে এসে বিস্কিটের টুকরোগুলো খেতে থাকে। আজ আবার অনু হলুদ রঙের একটি নতুন পাখি দেখলো,সে পাখিটির নাম না জানায় মনে মনে পাখিটির একটি নাম ঠিক করল-হলুদিয়া পাখি।হলুদিয়া পাখিকেও সে তার বন্ধু বানিয়ে নিলো।অনু পাখিদের খাওয়াতে খুব ভালোবাসে। পাখি আর পিঁপড়ারা হলো তার একদল বন্ধু। তার আরো একদল বন্ধু আছে।জোনাকি পোকারা হলো তার আরেকদল বন্ধু। সন্ধাবেলায় যখন সে তার ঘরে বসে জানালা খুলে বাইরে তাকিয়ে থাকে,অন্ধকারে সেখানে তখন অনেক জোনাকি পোকা এসে ভিড় করে এবং জায়গাটা আলোয় ঝলমল করে।অনু তখন মুচকি মুচকি হাসে আর তার মনের কথা খুলে বলে জোনাকি পোকাদের।

এইসব তার প্রতিদিনের কাজের মধ্যে পরে।সকালে উঠে উঠোন ঝাঁড় দেয়।  তারপর তাড়াতাড়ি করে চুলোয় ভাত বসায়,তারমধ্যে আবার সব সবজিগুলো কেটে অন্য চুলোয় তরকারি বসিয়ে দেয়।ভাত আর তরকারি একসাথে হয়ে যায়। তার কাকু খেয়ে কাজে চলে যায়।তার কাকিমার আর সকাল-সকাল উঠার প্রয়োজন হয় না। অনু এইটুকুনি বয়সে সব পারে,রান্না করতে,মাছ-সবজি কাটতে,সব কাজ করতে পারে সে।যখন অনুর তার বাবা-মায়ের কথা মনে পড়ে,তখন সে তার ঘরে বসে একা একা কাঁদে।কাঁদলে তার মনটা অনেকটা হালকা হয়ে যায়।যখন অনুর বাবা-মা মারা গিয়েছিলো,তখন তার বয়স ৫ বছর ছিল,তখন সে কিছু কিছু বুঝতো।সেই দিনগুলো অনুর হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে যায়,তখন সে কিছুক্ষণ কেঁদে তার মনটাকে হালকা করে তার কাজে চলে যায়।

 

এটাই অনুর জীবন,এভাবেই হয়ত অনুর সারাজীবন কাটবে। হয়তবা তার জন্য ভালো কিছু সময় আসবে ভবিষ্যতে।

 

 


বিজয় ঘোষ
Sandeep Roy
Nipendra Biswas
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

২টি মন্তব্য

Anik

Anik

৩ বছর আগে

👏👏👏

Nipendra Biswas

Nipendra Biswas

৩ বছর আগে

গল্পটা মনোযোগ দিয়ে পড়লে হৃদয়ে গিয়ে লাগে। একটা ছোট মেয়ের জীবনটা খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

নীল দ্বীপ (পর্ব ৬)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৬)

পরদিন সকালে শুভ্র আর মৃন...

পাহাড়ের চূড়া

পাহাড়ের চূড়া

             পাহাড়ের চূড়...

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে

প্রতিদিন যখন সন্ধ্যা নাম...

আমি (পর্ব৪)

আমি (পর্ব৪)

সকালের মিষ্টি রোদ আমার চ...

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত লে...

কে তুমি  (শেষ পর্ব )

কে তুমি (শেষ পর্ব )

                   কে তু...

Birthday যখন Foolday!!🎶

Birthday যখন Foolday!!🎶

 Birthday  যখন Foolday🎶...

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

রনি সেখানে যেয়ে ইসরাতকে ...

নীল দ্বীপ (পর্ব২)

নীল দ্বীপ (পর্ব২)

ব্রেকফাস্ট শেষে মৃন্ময় ত...

নাম হীন গল্প - শেষের অংশ

নাম হীন গল্প - শেষের অংশ

প্রথম অংশের পর…     তখন ...

সপ্ন যখন হ য ব র ল

সপ্ন যখন হ য ব র ল

আমি এখন বিয়ে বাড়িতে বাল্...

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

লেখিকাঃ রোদেলা রিদাএকবার...

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

১.ফল্টুদার নামের ইতিকথা—...

অদ্ভুতুড়ে

অদ্ভুতুড়ে

কদিন আগে আমি পিসির বাড়ি ...

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা —ফল্টুদ...

মাথা ব্যাথা

মাথা ব্যাথা

কপালের ডানপাশটা ব্যাথা ক...

দৃষ্টিগোচর

দৃষ্টিগোচর

জীবনে অসফল এক ব্যাক্তি আ...

বটমূল

বটমূল

ছুটির ঘন্টা পড়ে গেল.......

আমি (পর্ব২)

আমি (পর্ব২)

আজ পূর্ণিমা রাত।ছাদে একা...

রিক্সাচালক

রিক্সাচালক

প্রখর রোদে দাড়িয়ে আছে আয়...