অ্যাক্সিডেন্ট


অ্যাক্সিডেন্ট

অ্যাক্সিডেন্ট

 

আজ আমি ভীষণ খুশি —বাবা-মা সবাই খুশি। আজ আমার চাকরির প্রথম দিন।এতদিন ধরে বেকার ছিলাম –বাবার ঘাড়ের ভোঝা কমাতে পারছিলাম না।অনেক ইন্টারভিউ দিলাম –অনেক ছোটাছুটি করার পর এই চাকরিটা পেলাম।বাবা এতদিন পরে একটু বসে খেতে পারবেন।আমি বাবা-মার একমাত্র ছেলে।বাবা চাকরি করছে ২৫ বছর ধরে,আমিও

বাবাকে কোনো সাহায্য করতে পারছিলাম না।

বেতন বেশি পাব না ১৫ হাজার টাকা, কিন্তু এতেই বাবা-মাকে নিয়ে আনন্দে থাকবো।অন্তত বাবা তার বাকিটা জীবন খুশিতে কাটাতে পারবে আর আমি তো সবসময় ১৫ হাজার টাকা পাব না, ভালো করে মন দিয়ে কাজ করবো তখন আমার প্রমোশন হলে আমার বেতন তো বাড়বেই  হয়তো সময় লাগবে —কিন্তু চলবে।সেপর্যন্ত না হয় এভাবেই চলব।


 

আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার একটা স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে আমি চাকরি করে বড় একটা বাড়ি বানাবো, তখন আমি-মা-বাবা মিলে নিজেদের বাড়িতে থাকবো।আমাদের তিনজনের ছোট্ট একটা সুখী পরিবার। 

আমার বাবা  মাইনে কম পেত,কিন্তু আমাকে কখনো কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দেয়নি।মা-বাবা দু'জনেই আমাকে ছোটবেলা থেকে খুব আদরে বড় করেছে।

আমার বাবা-মাকে অনেকে অনেক কথা বলেছে।তারা এসবের তোয়াক্কা করেনি।কিন্তু আমার তখন খুব রাগ হতো—কেন তারা আমার বাবা-মাকে এমন কথা বলবে–কত অপমানের কথা কত কী না বলেছে।সেই তখন থেকেই আমি শপথ নিয়েছিলাম যে আমি বড় হয়ে তাদের জবাব দেব।আমার বাবা-মাও তখন তাদের বড়মুখ করে কিছু বলতে পারবে।

বাবা-মার অসুখ হলে তারা ডাক্তার দেখাতে চায়তো না,ভাবতো এই ডাক্তার দেখানোর টাকাটা দিয়ে আমার জন্য কিছু করতে পারবে।


 

আমি আজ বাবার বাইকে অফিসে যাব–এই বাইকটা বাবা নিজের মাইনে থেকে কিছু-কিছু করে টাকা জমিয়ে কিনেছিল। 

বাবা এই বাইকের চাবিটা আজ আমার হাতে দিলো।


 

আজ থেকে আমার স্বপ্নগুলো একে একে পূরণ করবো।বাবা-মার মুখের হাসিটা আমি অফুরন্ত দেখতে চাই।আজ বাবা-মা খুব খুশি,বাবা-মার খুশি দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। 

বাবা-মার পায়ে প্রণাম করে যাবার সময় বাবা-মাকে বলে গেলাম –'মা-বাবা যাই'

তখন মা বললো, 'যাই বলতে নাই বল আসছি'

বললাম,'আসছি'

চাকরির প্রথম দিন দেরি যাতে না হয়—তাড়াতাড়ি করে আসতে গিয়ে হেলমেট-টা আনতে ভুলে গেছি। সমস্যা নেই কাল থেকে মনে করে আনবো নে।

আমার শুধু বাবা-মার হাসিমাখা মুখটা চোখে ভাসছিল। 


 

হঠাৎ সব তছনছ হয়ে গেল।সব শেষ হয়ে গেল।পিছন থেকে একটা ট্রাক আমাকে ধাক্কা মারলো।বাইক থেকে ছিটকে পড়ে গেলাম আমি।মাথায় আঘাত পেয়েছি—খুব যন্ত্রণা হচ্ছে। 

আস্তে-আস্তে আমার স্বপ্নগুলো অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। আমার স্বপ্নগুলো শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল।

তখনও আমার চোখে শুধু দুজনের হাসিমাখা মুখটা ভাসছিল। 


 

আমার পৃথিবীটা আস্তে-আস্তে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। 

বাবা-মা —'আমি যাই'


Sandeep Roy
Nipendra Biswas
Champa Sen Pinky
Akash
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

১টি মন্তব্য

Nipendra Biswas

Nipendra Biswas

৩ বছর আগে

পড়ে ভালো লাগলো


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

অদ্ভুতুড়ে

অদ্ভুতুড়ে

কদিন আগে আমি পিসির বাড়ি ...

প্রতিবিম্ব

প্রতিবিম্ব

আয়নার সামনে বসে নিজেকে দ...

নীল দ্বীপ (পর্ব ৫)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৫)

মৃন্ময় খেয়াল করে দেখল শু...

করোনা

করোনা

নাম ছিলো তার করোনা। খুব ...

আমি (পর্ব৫)

আমি (পর্ব৫)

বিচিত্র পৃথিবীর মাঝে বেঁ...

পাহাড়ের চূড়া

পাহাড়ের চূড়া

             পাহাড়ের চূড়...

উধাও  || পর্ব -১

উধাও || পর্ব -১

৬৬ সালের মে মাস…. প্রমাণ...

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

১.সুবিমলবাবু অনেকদিন পর ...

~পিল্টু

~পিল্টু

রেলস্টেশনটার পিছনের দিকে...

অ্যাক্সিডেন্ট

অ্যাক্সিডেন্ট

অ্যাক্সিডেন্ট আজ আমি ভীষ...

সব পেশাই কি সমান???

সব পেশাই কি সমান???

সবাই বলে সব পেশাই সমান!স...

আমি এমনই

আমি এমনই

যখন চারিপাশে অশান্তি অনু...

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত লে...

আমি(শেষপর্ব)

আমি(শেষপর্ব)

তখন রাত।বসে আছি।ছাদে যেত...

আবার ফিরে দেখা

আবার ফিরে দেখা

   “ ঈপ্সিতা” ডাকটা শুনে...

লায়লা

লায়লা

"তুমি ছুয়ে দিলে হায়, কিয...

সপ্ন যখন হ য ব র ল

সপ্ন যখন হ য ব র ল

আমি এখন বিয়ে বাড়িতে বাল্...

শেষ

শেষ

      ফোন রিং হওয়ার শব্দ...

অদ্ভুত-উদ্ভট

অদ্ভুত-উদ্ভট

এ কোথায় এলাম আমি?হঠাৎ দে...

তুমি অনন্যা  (পর্ব ৬)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৬)

রনির মন চাচ্ছে আবার দেখা...