নাম হীন গল্প - প্রথম অংশ


নাম হীন গল্প - প্রথম অংশ

কিছু গল্পের কোনো নাম থাকে না এটাও তেমনি একটা নামহীন গল্প । এটাও আমার দাদুর পাঠাগার থেকে পাওয়া গল্প যেভাবে আছে সেভাবেই লিখে দিলাম ।।


আপনারা কেউ সনাতনকে চিনেন ? চিনেন না ?

না চেনারি কথা । সনাতন কোনো সুপরিচিত ব্যাক্তি নয় যে লোকেরা তাকে চিনবে । যাক আমি বলছি সনাতন কে । সনাতন হলো আমাদের পাশের ফ্লাটের ভাড়াটিয়া। সে ফ্লাটে একাই থাকে । এখানে অবশ্য তার সম্পর্কে একটু বলে নেওয়া উচিৎ। দেখতে সে উচু-লম্বা একটু কালো এবং রোগা। সিগারেট খায় কিন্তু বাকি বৃদ্ধ লোকেদের মতো কাশে না । হাটার সময় বাদিকে একটু খুড়িয়ে হাটে। এমনিতে তাকে আমি চিন্তাম না । কিন্তু গত বছর কোনো একটা কাজে তার ঘরে গিয়েছিলাম । তখনি তার সাথে আমার প্রথম কথা হয়েছিলো। সে আমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানল এবং তার সম্পর্কে আমাকে অনেক কথাই বলল। বয়সে একটু বৃদ্ধ হয়েছে তো তাই বোধয় নতুন কাউকে পেয়ে তার অতিতের কথা আরম্ভ করেছিল। কথা বলার একটা পর্যায়ে সে তার অতীতে ঘটা কিছু ঘটনাও বলতে আরম্ভ করলো । আমিও সেটা মনদিয়ে শুনতে আরম্ভ করলাম।

-              আমি সনাতন। বয়স-তো অনেক হইছে। তোমারে দেইখা আমার একটা কথা মনে পড়লো। কথা না ঘটনাই তাও আবার সত্তিকারের আমার জীবনের ঘটনা। যখন তোমার বয়সের ছিলাম তখন নতুন নতুন ঢাকায় আসলাম। যদিও ঘুরতে আসছিলাম না তবুও আমার খুব ভালো লাগছিলো। আমার এক চাচা আমার জন্যে একটা কাজ জোগার করেছিলো। কাজটা হইলো তার সাহায্য করা । সে একটা হাসপাতালের মর্গে চাকরি করতো আর আমি তার সাহায্য একটু আধটু সাহায্য করবো এই আরকি। প্রথম কয়দিন চাচর বাড়িতে একটু বিশ্রাম নিলাম আসেপাশের পরিবেশ ঘুরে দেখলাম। এরপর একদিন চাচা বললো ”চল তরে আমাগো কাজের জায়গাটা দেখাই।” আমিও রাজি হয়ে চলে গেলাম চাচার সাথে।

 

শহরের থেকে একটু দূরে শান্তি পূর্ণ একটা জায়গায় হাসপাতাল আর তার পাশেই হাসপাতালের মর্গ। আমার দেখে ভালই লাগলো । ভাবলাম এতভালো একটা জায়গায় কাজ । কাজ বলতে তো গাড়িতে লাশ উঠিয়ে দেওয়া আর কেউ মারা গেলে তার লাশ মর্গে নিয়ে আসা এটুকুই তো । আমি মনে মনে আনন্দিতই হলাম। গ্রামে লাশ গোসল করিয়ে কররের ব্যবস্থা তো এমনিই করতে হয়। আর এইখানে তো খুব বেশি কাজও না । অইদিন বাকি লোকেদের সাথে পরিচিত হয়ে ফিরে আসলাম এবং জেনে আসলাম যে পরের দিন বিকেল চারটে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত ডিউটি । নতুন চাকরি পেয়েছি এই ঘোরেই একদিন কেটে গেলো । পরের দিন ঠিক সময়ে গিয়ে পৌছালাম । মর্গের  গেটে যেতেই নাকে একটা বিশ্রী গন্ধ আসলো । চাচাকে বললাম।

-              চাচা এতো খারাপ গন্ধ ক্যান ?

-              আরে প্রথম প্রথম নতুন জায়গাতে আসছো তাই তোমার এমন মনে হইতাছে । কিছুদিন গেলেই সব ঠিক হইয়া যাইবে।

-              না চাচা, একটু বেশী গন্ধ লাগতাছে ।

-              তাইলে এক কাজ কর ঐখান থেকে একটা মাস্ক পরে নে।

চাচার কথামতো আমি মাস্ক পরলাম তার কিছুক্ষন পরেই । এক অ্যাম্বুলেন্স আসলো মর্গের বরান্দার সামনে। একটা লাশ উঠিয়ে দিতে হবে। প্রথমদিন আর প্রথম দিনের প্রথম কাজ ।

মর্গের ভিতরে ঢুকলাম এবং এই প্রথম ভালো ভাবে দেখলাম । যে লাশটা গাড়িতে উঠিয়ে দিতে হবে সেটা একটা টেবিলের উপর শুয়ানো আছে । লাশের টেবিলের সামনে গেলাম আমি আর আমার চাচা । লাশের মুখের কাপরটা সরাতেই দেখি ফুটফুটে একটা পনেরো কি ষোল বছরের মেয়ে মাথা ভর্তি চোল ।

চোখের নিচে এমন ভাবে কালো দাগ পড়েছে যে দেখে মনে হচ্ছে যেনো কাজল পড়ানো হয়েছে। দেখে আনেক মায়া লাগলো কিন্তু আমাদের কি করার । চাচার দিকে একটু তাকালাম তারপর চাচ আর আমি মিলে ধরে লাশ গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসলাম । বাইরে থেকে অনেক কান্নার শব্দ আসছিলো মেয়েটার সজনরা বেধয় কান্না করছিলো ।  সেদিনের মতো আর কোনো কাজ আমাদের করতে হয়নি ।

তো এভাবে দু-একদিন গেলো এরকম লাশ উঠানো নামানো । এরপর একদিন চাচা বলে চল আজ একটা লাশ কাটতে হবে । আমি তখন তেমন চমকে উঠি না । ইতোমধ্যে আমার এ ব্যাপারে জানা হয়ে গেছে । মর্গে ভেতর ডুকলাম তারপর টেবিলের উপর শুয়ানো লাশটার কাপর সরিয়ে ছুরিটা হাতে নিলাম ।

 

থাক !!!

আমি সনাতনকে বললাম আমার কাজ আছে আরেকদিন এস আপনার ঘটনা শুনে যাবো । সনাতন বললো

-              কেনো ? এটুকুতেই ভয় পাচ্ছো ?

-              নাহ্..... ভয় পাবো কোনো । না ভয় পাইনি আজ সত্তিই আমার একটা কাজ আছে তাই চলে যাচ্ছি । আরেকদিন এসে আপনার গল্প শুনে যাবো ।

-              আচ্ছা যাও ।

আচ্ছা ঠিক আছে চলি । এই বলে সেদিন আমি চলে আসি । কিছুদিন ভালোই কাটলো । এরপর আস্তে আস্তে মনের মধ্যে একটা খুত চলে আসলো । এমন মনে হতে লাগলো যেনো সনাতনের বাকি ঘটনা আমাকে যেকোনো মূল্যে শুনতেই হবে। তাই  আমিও একঠা সুযোগ খুজতে থাকি ঘটনা শুনতে যাওয়ার জন্যে ।  হঠাৎ একদিন সে সুযোগ এসেই পরলো । বাড়িতে কিযেনো একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিলো আর আমি সে অনুষ্ঠানে থাকতে চাচ্ছিলাম না । তাই চলে গেলাম সনাতরের বাসায় । বাড়িতে কেই চিন্তা করবে না । সবাই সবার মতো ব্যস্ত আছে । এই ফাকে সনাতনের বাকি গল্পটা শুনে নেওয়া যাবে । সনাতনের দড়জায় করা নারলাম । নাহ্ তার কলিং বেল নেই । সনাতন দড়জা খুলে দিলো এবং ভিতরে যেতে বললো । এরপর সে নিজে থেকেই বলে উঠলো

-              ও তুমি... বাকি ঘটনা শুনতে এসেছ ?

আমি একটু অবাক হয়ে বললাম

-              হ্যা । তাহলে শুরু করুন ।

-              হ্যা শুরু তো করবই । আজ বরং অন্য একটা ছোট ঘটনা বলি ।

-              অন্য ঘটনা কেনো ?

-              আজ তো তুমি রাতে এসেছ তাই রাতের একটা ঘটনা বলি ।

-              আচ্ছা বলেন ।

সনাতন ঘটনা বলতে আরম্ভ করলো ।

 

……


অর্পন
সিকন
Akash
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

প্রথম মন্তব্য লিখুন


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

পথশিশু

পথশিশু

লাবণ্য,  একজন পথশিশু। পথ...

হাস্যকর এক কাণ্ড

হাস্যকর এক কাণ্ড

কয়েকদিন আগের কথা। আমি যে...

আমি (পর্ব৭)

আমি (পর্ব৭)

খোলা আকাশের নিচে এসব কথা...

কিছু করার নেই

কিছু করার নেই

 ১.আজকালকার দিনে চাকরি প...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

ইসরাত কাছে এসে বললো,"আচ্...

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে

প্রতিদিন যখন সন্ধ্যা নাম...

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

১.ফল্টুদার নামের ইতিকথা—...

লায়লা

লায়লা

"তুমি ছুয়ে দিলে হায়, কিয...

নীল দ্বীপ (পর্ব ৭)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৭)

মৃন্ময় বললো,"উনি আমাকে ভ...

বটমূল

বটমূল

ছুটির ঘন্টা পড়ে গেল.......

রোহান বিল্লা

রোহান বিল্লা

     রোহান বিল্লা   লেখি...

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

❝বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ ...

জিহাদ বাবু

জিহাদ বাবু

 হাসি হাসি আর হাসি রিফাহ...

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

রনি সেখানে যেয়ে ইসরাতকে ...

আবার ফিরে দেখা

আবার ফিরে দেখা

   “ ঈপ্সিতা” ডাকটা শুনে...

হ্যাবলা

হ্যাবলা

গ্রামের নাম পলাশপুর।গ্রা...

অ্যাক্সিডেন্ট

অ্যাক্সিডেন্ট

অ্যাক্সিডেন্ট আজ আমি ভীষ...

খাঁটি পাগল

খাঁটি পাগল

বিধূবাবুর কাছে এক পাগল এ...

~পিল্টু

~পিল্টু

রেলস্টেশনটার পিছনের দিকে...

নীল দ্বীপ (পর্ব২)

নীল দ্বীপ (পর্ব২)

ব্রেকফাস্ট শেষে মৃন্ময় ত...