আসক্ত


আসক্ত

১.


 

আমি ভিডিওগেম আসক্ত। এই আসক্তি আমার সব শেষ করে দিয়েছে।

অনেক চেষ্টা করেছি আসক্তি দূর করার,কিন্তু পারি নি।


 

আগে সব ঠিক ছিল।ঠিকমতো পড়ালেখা করতাম,খেলতাম,ঘুমাতাম,পরিবারের সাথে সময় কাটাতাম,বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতাম।এখন আর কিছুই করা হয় না।এখন শুধু আমার গেম খেলতে ভালো লাগে—শুধু গেম,অন্যকিছু না।

অনেকগুলো স্বপ্ন ছিল। মনে হয় না স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারবো।


 

পড়ালেখায় খুব মনোযোগী ছিলাম।স্কুলের ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন ছিলাম।বিভিন্ন অলিম্পিয়াড দিতাম।বাবা-মা আমাকে নিয়ে গর্ববোধ করতো।

আমার জীবনটা ঠিকভাবে চলছিল। কিন্তু আমি ঠিক রাখতে পারি নি। 


 

২.


 

স্কুলের বন্ধুরা  একটা গেম নিয়ে বলাবলি করছিল।যেভাবে বর্ণনা দিচ্ছিল—আমার লোভ হলো গেমটা একবার খেলে দেখার।

গেমটার নাম জানলাম বন্ধুদের থেকে। বাবার মোবাইলে গেমটা ডাউনলোড দিলাম।গেমটা সত্যি-ই দারুণ ছিল।গেমটার গ্রাফিক্স,ডিজাইন ছিল পুরো অসাধারণ। 

প্রথম প্রথম একটু একটু করে খেলতাম।খেলতে দারুণ লাগতো।একবার বাবা গেমটা ডিলিট করে দিয়েছিল। আমি আবার গেমটা ডাউনলোড দিয়েছিলাম। 


 

৩.


 

যখন থেকে গেমটা বেশি খেলা শুরু করেছিলাম তখন বাবা আমাকে আর মোবাইল দিতো না।তারপরও আমি লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতাম। বাবা ডিলিট করে দিতো আর আমাকে বকতো।

তখনও আমি গেম খেলতাম—ডাউনলোড করে খেলে আবার ডিলিট করে দিতাম,যাতে বাবা কিছু বুঝতে না পারে। তখন আমি একদিন যদি গেম না খেলতাম,আমার ভালো লাগতো না।তখনই যে আমি আস্তে আস্তে আসক্ত হচ্ছিলাম বুঝতে পারি নি। 


 

৪.


 

আস্তে আস্তে আমি পড়ালেখার থেকেও বেশি সময় গেমে দিতে লাগলাম।আমি স্কুলেও যেতাম না ঠিকমতো।স্কুল ফাঁকি দিয়ে গেম খেলতাম। ঠিকমতো পড়ালেখা করতাম না বলে স্যার-ম্যাডামরা আমাকে বকতো।মাঝে-মাঝে বাবা-মাকে স্কুলে ডেকে আমার নালিশ করতো।আমি কারও সাথে মিশতামও না বেশি।

আমার বন্ধুরাও আমার সাথে কথা বলতো না,কারণ,—আমি সবসময় গেম নিয়েই চিন্তা করতাম—কিভাবে গেমের লেভেল বাড়ানো যায়?নতুন কোন উইপনটা কিনলে দ্রুত গেমের লেভেল বাড়ানো যাবে?–এসব।আর ওরা যখন আমার সাথে কথা বলতে আসতো তখন আমি ওদেরকে গালি-গালাজ করতাম।আমার মাথা সবসময় গরম থাকতো। আমাকে কেউ কিছু বললেই আমি তাদেরকে শুধু শুধু গালি-গালাজ করতাম।তাই ওরা আর আমার সাথে কথা বলে না,মিশেও না।

আমি আস্তে আস্তে পুরো বদলে যাচ্ছিলাম।


 

আমি গেমের কাল্পনিক জগতে বাস করতে লাগলাম। তখন আমি বুঝতে পারি নি যে,কাল্পনিক জগৎ সহজ কিন্তু খারাপ,বাস্তব জগৎ কঠিন হলেও ভালো। 


 

আমি মাত্রাতিরিক্ত গেম খেলা শুরু করেছিলাম। বাবা আমার কাছ থেকে মোবাইল নিতে চায়লে আমি বাবার উপর রাগ দেখাতাম।আমি আগে কখনো বাবার উপর রাগ দেখাই নি।


 

৫.


 

আমি জানি কেমন হয়ে যাচ্ছিলাম আমি নিজেও বুঝতে পারছিলাম না।আমি গেমে নিজেকে কল্পনা করতে লাগলাম। গেম-ই যেন আমার সব হয়ে উঠলো।

আমি নিজের একটা মোবাইল চাইলাম বাবার কাছে—বাবা না করলো।এ নিয়ে আমি বাবার সাথে অনেক  ঝগড়া করলাম। বাবাকে ইচ্ছেমতো বকলাম। আমি চাচ্ছিলাম না বাবার সাথে ঝগড়া করতে,বাবাকে বকতে। তবু আমি না চাইতেও এসব হতে লাগলো।ঘরে একটা অশান্তি লেগে গেল।আমি শুধু গেমের জন্য বাবার সাথে এমনটা করতে পারলাম?


 

পরে মা কোত্থেকে জানি আমাকে একটা মোবাইল এনে দিলো।

আমি পড়াশোনাও ছেড়ে দিয়েছিলাম।সারাদিন শুধু গেম খেলতাম। রাত জেগে গেম খেলতাম। মা-বাবা কিছু বললে তাদের সাথে রাগ দেখাতাম। 


 

তারপর থেকে তারা আর আমাকে কিছু বলতো না।তাদের চেহারায় অশান্তির ছাপ দেখেও আমি তাদের সাথে খারাপ আচরণ করছিলাম।

আমাকে কিছু বললেই আমি রেগে যেতাম!

আমার কাছের মানুষেরা আমার থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে যেতে লাগলো।


 

৬.


 

মাঝে-মাঝে আমার মনে হতো যে, আমি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি। এটা আমার অনেক ক্ষতি করছে।আমার পরিবারে অশান্তি বয়ে আনছে।তাও আমি এটা ছাড়তে পারি নি।


 

আমি গেমের জন্য কেমন জানি হয়ে গেছিলাম। কোনোসময় মোবাইলে চার্জ না থাকার কারণে যদি মোবাইল অফ হয়ে যেত,আমি গেম খেলতে না পারতাম,তখন আমি অদ্ভুত-অদ্ভুত আচরণ করতাম। 


 

 বাবা-মা আমাকে একটা সাইকাট্রিস্ট না কিসের কাছে যেন নিয়ে যেতে চেয়েছিলো।আমি গেলাম না,উল্টো তাদের সাথে ঝগড়া করলাম।বাবা-মার সাথে আমার প্রতিনিয়ত ঝগড়া হতো।আমি না চাইতেও কেন জানি এমন করছিলাম। 

আমি বুঝতে পারছিলাম যে,এই আসক্তি আমার সব শেষ করে দিচ্ছে, তাও আমি এই আসক্তি থেকে বের হতে পারলাম না। আমি গেম না খেলে থাকতেই পারতাম না।


 

৭.


 

অনেক চেষ্টা করেছি,এই আসক্তি দূর করার,কিন্তু পারি নি।আসলে ভিডিওগেম কারও এত বড় আসক্তি হতে পারে,আগে বুঝতে পারি নি। 


 

আমি আর বাবা-মাকে কষ্ট দিতে চাই না।আমি আর ঘরে অশান্তি করতে চাই না। 

তাই আমি ঠিক করেছি,আমি সুইসাইড করবো।আমি জানি না এটা ঠিক পথ নাকি ভুল?এটা করলে কি সব ঠিক হয়ে যাবে?এটাই কি আসক্তি দূর করার শেষ উপায়?—আমি কিছু জানি না। 


 

কিন্তু আমার মনে হচ্ছে,এটাই শেষ উপায়। এটা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মা-বাবাকে আর আমার জন্য কষ্ট পেতে হবে না।তাদের এমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকা-ই ভালো।

 মরে গেলেই আমাকে আর কোনো আসক্তি ছুঁতে পারবে না।নাহলে,ঘরে এমন অশান্তি লেগেই থাকবে আমার জন্য। বাবা-মা বাইরে কাউকে মুখ দেখাতে পারবে না।

আর আমি বেঁচে থাকলে গেম ছাড়া একমুহূর্তও থাকতে পারবো না।

আমি আসক্তির চরম সীমায় এসে গেছি।


 

এখন আমার আসক্তি দূর করার একটাই উপায়—সুইসাইড।

 

 

 

বিঃদ্রঃ (এই গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এর সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই।)


 


Nipendra Biswas
Sandeep Roy
Akash
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

১টি মন্তব্য

Anik

Anik

৩ বছর আগে

@nipendrabiswas আমি নিজে গেইম খেলি। আর যদি বাস্তবের মিল বলেন তাহলে বলবো পরিবারের সমস্যা আছে। আপনি কাইন্ডলি ই-স্পোর্টসের ব্যাপারে জেনে নিবেন।


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

নীল দ্বীপ  ( পর্ব ৪)

নীল দ্বীপ ( পর্ব ৪)

মৃন্ময় বাসায় এলো।রুমে ঢু...

কয়েকদিন হাসপাতালে

কয়েকদিন হাসপাতালে

একবার আমার কয়েকদিন হাসপা...

বন্ধু

বন্ধু

রিজু,আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।...

প্রিয় মা

প্রিয় মা

  প্রিয় মা,কেমন আছো তুমি...

মিষ্টি ভালোবাসা

মিষ্টি ভালোবাসা

বউটা আজকে আমার উপর অনেক ...

অনুকথন

অনুকথন

অন্নদার ডাক নাম অনু।অনুর...

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত

কবরস্থানের মাঠে একরাত লে...

মিঠু

মিঠু

  আমি মিঠু। পুরো নাম মিঠ...

আমি (পর্ব৭)

আমি (পর্ব৭)

খোলা আকাশের নিচে এসব কথা...

নিদ্রাহীন

নিদ্রাহীন

রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে...

রিক্সাচালক

রিক্সাচালক

প্রখর রোদে দাড়িয়ে আছে আয়...

প্রতিবিম্ব

প্রতিবিম্ব

আয়নার সামনে বসে নিজেকে দ...

শুভ্র ও রাইসা

শুভ্র ও রাইসা

বিকাল বেলা বাহিরে মেঘ ডা...

টিভিকথন

টিভিকথন

আমাদের ছাদে একটি স্টোররু...

কিছু করার নেই

কিছু করার নেই

 ১.আজকালকার দিনে চাকরি প...

অদ্ভুতুড়ে

অদ্ভুতুড়ে

কদিন আগে আমি পিসির বাড়ি ...

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

❝বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ ...

ছোটগল্প

ছোটগল্প

আমি গল্প লিখি। তবে লেখক ...

পথশিশু

পথশিশু

লাবণ্য,  একজন পথশিশু। পথ...

হাস্যকর এক কাণ্ড

হাস্যকর এক কাণ্ড

কয়েকদিন আগের কথা। আমি যে...