“ ঈপ্সিতা” ডাকটা শুনে পিছনে ফিরে তাকালো ও।
গত ৫ বছর আগে এই একই পুজো মণ্ডপে ওর সাথে আমার প্রথম দেখা।আর আজ আবার ফিরে দেখা ওর সাথে।কিন্তু আজ ও সেই ঈপ্সিতা না,আজ ও একজন বিবাহিতা নারী।আজ ও শাড়ি পড়েছে,কপালে সিঁদুর,হাতে শাখা।
পিছনে ফিরে তাকিয়ে ও কিছুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বললো,”আকাশ..কেমন আছো?”
আমিও ওর দিকে তাকিয়ে ছিলাম, কিন্তু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তরটা দিলাম,”ভালো, তুমি কেমন আছো ঈপ্সিতা?”
“হ্যা,ভালোই”
তারপর আবার কিছুক্ষণের জন্য নিরবতা।
নিরবতা ভেঙে আমি প্রশ্নটা করে ফেললাম,”তুমি বলেছিলে তুমি কাশবন দেখতে যাবে,আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করেছিলাম-কিন্তু তুমি এলে না কেন?”
প্রশ্নটা করে মনে হয়েছিল যে,প্রশ্নটা করা কি আমার উচিত হলো?কিন্তু করে তো ফেললাম !
“আমি আসতে চেয়েছিলাম,কিন্তু....”
“কিন্তু কি ঈপ্সিতা?”
“সেদিন আমায় দেখতে এসেছিলো,আমি কিছু জানতাম না,নাহলে আমি তোমাকে জানাতাম সব”
“আমি তোমাকে ফোন করেছিলাম..তুমিও তো পরে আমাকে সবকিছু জানাতে পারতে ঈপ্সিতা?”
ঈপ্সিতা হাহাকারের মতো সুরে উত্তর দিলো,”আকাশ..আমার ফোনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল,কিন্তু পরে আমি তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারি নি-কারণ,আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তারপরও আমি অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাও তোমার সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারি নি। “
“ও..”
“তুমিও তো আমার সাথে কোনো যোগাযোগ করো নি?”
“কারণ,আমি পরেরদিনই দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলাম।আমার চাকরিটা হয়ে গিয়েছিলো।“
“তুমি তো আমাকে কিছু জানাও নি?”
“জানাতাম,সেদিনই জানাতাম-কিন্তু সেদিন তো তুমি আসোই নি।“
“আকাশ...”
ঈপ্সিতা আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু ওর বর এসে ওর পাশে দাঁড়ালো।ও নিজেকে সামলে নিয়ে আমার সাথে ওর বরের পরিচয় করিয়ে দিলো,”আকাশ,ইনি অরিত্র-আমার প্রিয় বর।আর অরিত্র,ইনি আকাশ-আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। “ মুখে একটা ছোট্ট হাসি নিয়ে কথাটা বললো ঈপ্সিতা।
আমি বললাম,” তা,কেমন আছেন অরিত্র?”
“ভালো,আপনি?”অরিত্র একটা হাসি দিয়ে বললো।
“এইতো কেটে যাচ্ছে।“
“আপনাকে তো বিয়েতে দেখি নি।“
“আসলে আমি দেশের বাইরে ছিলাম, তাই বিয়েতে আসতে পারি নি।গত মাসেই ফিরলাম।“
“ওওও......”
“আচ্ছা,তো একদিন আমাদের বাসায় আসুন না,জমিয়ে আড্ডা দেবো?হাজার হোক,আপনি আমার স্ত্রীর বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কথা,আমারও তো তাহলে বেস্ট ফ্রেন্ড।“
“অবশ্যই আসবো।“
“কিন্তু আমাদের এখন যেতে হবে,আমাদের কাশবনে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান আছে।“
“হ্যা,হ্যা”
আমার সাথে ঈপ্সিতা কাশবনে যেতে চেয়েছিলো,কিন্তু যাওয়া হয়নি। আজ অরিত্র ওকে নিয়ে কাশবনে যাবে।
“থ্যাঙ্কস।“ তারপর অরিত্র ঈপ্সিতার দিকে তাকিয়ে বললো,”যাওয়া যাক,ঈপ্সিতা?”
“হুম..”ঈপ্সিতা বললো।
“আকাশ,যাচ্ছি তাহলে আজ।তুমি একদিন আমাদের বাসায় এসো।“
“অবশ্যই যাবো, ঈপ্সিতা।“
অরিত্র ঈপ্সিতার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো।ঈপ্সিতা একবার আমার দিকে তাকিয়েছিলো,তারপর আবার হাঁটতে শুরু করলো।
ঈপ্সিতাকে শাড়িতে কি সুন্দর যে লাগছিলো!একসময় আমিও ওকে এইরূপেই কল্পনা করতাম,কিন্তু আজ এই কল্পনায় আমার কোনো অধিকার নেই। আছে তো, শুধুমাত্র অরিত্রর।
ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে কেন জানি আমার চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে এলো!
২টি মন্তব্য
Nipendra Biswas
৩ বছর আগে
😔😔😔😔😔😔😔😔😔
রিদা
৩ বছর আগে
😟☹️😔😔
মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে