ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)


ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর  বাড়িতে কয়েকদিন....( পর্ব ১) 
লেখিকাঃ রোদেলা রিদা 

শীতের ছুটিতে ছোট  দাদু ফোন দিলো গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য।  ছোট   দাদু প্রতিবারই ফোন দেয়।গ্রামে তো এসময় পিঠাপুলির উৎসব লাগে।  তো এবার পরীক্ষা শেষে আমি আর আমার বান্ধবীরা খুব বোর হচ্ছিলাম!  কিছু করার নাই! তো আমি যেহেতু গ্রামের বাড়িতে যাবো,  তাদেরকেও বললাম তারা আমার সাথে যাবে কিনা! আমি তাদের সাথে যাওয়ার কথা বলার সাথে সাথেই তারা এক পায়ে রাজি! কিন্তু সমস্যা হলো তাদের মা -বাবা! পরে অনেক বুঝায় সুজায় অ্যান্টি - আঙ্কেলদের রাজি করালাম।  অবশেষে আমি,  সামিয়া,  মাইশা,  রোজা,  জারিন, নুরি  ইতি,  রাফিয়া,  মুনতাহা  গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালাম ছোট দাদুকে আমি আগেই বলেছিলাম আমার সাথে আমার বান্ধবীরাও আসবে,  তাই তিনি আমাদের থাকার সব ব্যবস্থা আগেই করে রেখেছে।   ছোট দাদুর বাড়িতে ছোট দাদু,  ছোট দাদি,  চাচু - চাচি থাকে!  আর আমার দুই চাচাতো ভাই বোন থাকে।  নওরিন আর রুহান!   নওরিন বড় আর রুহান ছোট! 

আমরা যেদিন গেলাম সেদিন যেতে যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেল তাই আর বাড়ির বাহিরে গেলাম না।  সেদিন অবশ্য আমরা বেশ ক্লান্তও ছিলাম রাতে খাবার খেয়ে ছোট দাদী আর চাচির সাথে একটু গল্প গুজব  করে শুতে চলে যাই।  রুহান  চাচু -চাচির সাথেই ঘুমায়, নওরিন আমাদের  দলে  যুক্ত হলো। 
এমনি শীতের রাত,  আর আমরা সবাই একখানে,মজা তো হবেই! শীতের রাতে লেপ/কম্বলের তলে ঢুকে আড্ডা দিতে খুব ভালো লাগে! 
আমাদের সবাইকে ছোট দাদী  গ্রামের খাঁটি দুধ পান করতে দেয়,  আমরা দুধের গ্লাস হাতে নিয়ে বিছানার উপর   লেপ/কম্বলের নিচে বসে  গল্প করতে থাকি...  


সামিয়া: আহা, কী আনন্দ শীতের রাতে... লেপ/কম্বলের নীচে.... হাতে গরম গরম দুধের গ্লাস নিয়ে...  আড্ডা দিতে দিতে...  আহা, কি আনন্দ!! 

আমি: বাহ! বাহ! সামিয়া কবি! বাহ! বাহ! (হাত তালি দেই) 

বাকি সবাই: হি.. হি.. হি...

সামিয়া: হাসির কি হইলো??

মাইশা: ও কিছু না.. এমনি...

নুরি: তোর গান/কবিতা সেই হইছে! তাই আরকি একটু হাসলাম!

সামিয়া: তো এখানে হাসার কি হইলো? 

জারিন: ও তুই বুঝবি না!... 

আমি: হি হি হি... 

সামিয়া: যত্তোসব ছাগলের দল! 
 
রাফিয়া: আচ্ছা  এসব বাদ দে! কোনো গল্প বল!  এই সময় গল্প শুনতে ভালো লাগে!

নওরিন: কি ধরনের গল্প রাফিয়া আপু?

রাফিয়া: কোনো রহস্যময়,  ইন্টারেস্টিং, ভুতূড়ে টাইপের! 

ইতি: হ্যাঁ হ্যাঁ ভূতূড়ে!  

মুনতাহা : আবার ভুত? 

রোজা: কেন? ভয় লাগে নাকি?

মুনতাহা: না! না!  ওই যে কবরস্থানের মাঠে একরাত!! 

জারিন: হা..হা..হা.. আচ্ছা ওটা কি আসলে সত্যি ছিলো?? 

নুরি: না আপু ওটা আমাদের বানানো একটা রূপকথার গল্প ছিলো!হইছে??-_-

মুনতাহা: কি বলিস নুরি??

আমি: আরে..মুনো... নুরি মজা করছে! আর জারিন হ্যাঁ রে সত্যি ছিলো! 

সামিয়া: এসব বন্ধ কর তো! হ্যাঁ এগুলো বাদে কে কি গল্প বলবি বল তো! আমি একটু শুনি! 

রোজা: কিরে.. তুইও ভয় পাইলি নাকি? 

সামিয়া: কিসের ভয়?? 

রোজা: না..মানে...

নওরিন: আপু জানো আমাদের এখানেও ভূত আছে! 

সবাই কিছুটা চমকে উঠার মতো হলো...

রাফিয়া: ভূত!?

নওরিন: হ্যাঁ ভূত! তোমরা আামাদের বাড়ি আসার আগে রাস্তার পাশে একটা মাদ্রাসা দেখেছিলা না?

নুরি: হ্যাঁ..

নওরিন: ওখানে তো জ্বীন আছে! সেজন্য ওখানে মাদ্রাসা করা হয়েছে।  আবার সামনে নদীর পাড়েও তো খারাপ বাতাস আছে! 

জারিন: কি বলো??

মাইশা:জ্বীন তো সবখানেই থাকে,  সেটা বিষয় না!  বিষয়টা হচ্ছে এই খারাপ বাতাস কি??

নওরিন: আরে..আপু ওইযে কালো জাদু করে না!  শয়তান ডাকে! খারাপ জ্বীন ডাকে! তারপর সেগুলো আবার মানুষের পিছে ছাড়ে দেয়! ওই টাইপের!

মাইশা: ওহ!! 

রাফিয়া: এই রাতে এগুলো কি বলো! ভয় দেখাও কেন মেয়ে!!  

নওরিন: ভয় দেখাচ্ছি না আপু! সত্যি!!  একবার তো একটা ছেলে নদীতে সাঁতার কাটছিলো! সাঁতার কাটতে কাটতে হঠাৎ করে ডুবে যায়! ওরা চারজন ছিলো, বাকি তিনজন পাড়ে উঠে আসে কিন্তু বাকি একজন আর উঠে নাই।  নদীর মধ্যে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওকে পাওয়া যায় না।  পরে ওর মা-কে স্বপ্ন দেখানো হয় যে নদীর ধারে একটা ছাগল কুরবানি দিলে তার ছেলেকে পাওয়া যাবে!  তারপর তারা একটা ছাগল ওই নদীর ধারে কুরবানি করে।  কুরবানির রক্ত নদীর পানির সাথে মিশে যাওয়ার সাথে সাথেই ছেলেটির লাশ তাদের চোখের সামনেই পানির উপর ভাসে উঠে!

মুনতাহা: ও বাবা গো!!...

ইতি: এটা কি সত্যি ঘটনা??

আমি: হ্যাঁ রে সত্যি!  

রোজা: কি বলিস?!

নওরিন: হুমম...এরকম তো আরও অনেক গল্প আছে! 

সামিয়া: ই...ই...ই....! ( সামিয়া কম্বল দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে নেয়)

জারিন: হইছে! হইছে! এসব কথা বন্ধ কর! অনেক রাত হইছে, আমার ঘুম ধরছে! ঘুমাবো! 

ইতি: হ্যাঁ! হ্যাঁ! আমিও ঘুমাবো! 

নওরিন হিহিহি করে হেসে উঠল,  আমরা সবাই নওরিনের দিকে একটু রাগী রাগী ভয় ভয় চেহারা নিয়ে একসাথে তাকালাম!  নওরিন হাসি থামায় আমতা আমতা করে বলল,

- কি! চলো ঘুমাই! দেও গ্লাসগুলো দেও রাখে আসি! 

নওরিন  অতি দ্রুত উঠে গ্লাসগুলো রাখতে চলে গেলো!

মুনতাহা: নওরিন মনে হয় আমাদের ওভাবে ওর দিকে তাকানোয় একটু ভয় পাইছে! 


নুরি: হ্যাঁ! 

সবাই হি হি হি করে হেসে উঠলাম!  নওরিন ঘুরে ঢুকতেই আমরা হাসি থামায় যে যার শোয়ার জায়গায় চলে গেলাম। আমরা অবশ্য  একরুমেই  সবাই একসাথে ঘুমাবো, শীতের রাতে সবাই জোড়াজুড়ি করে ঘুমানোর মাঝেও একটা আলাদা মজা আছে,  আনন্দ আছে!!

 

 

( ভুল-ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিস :)) 

 

 

চলবে…..


অর্পন
তিনি এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

প্রথম মন্তব্য লিখুন


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

খাঁটি পাগল

খাঁটি পাগল

বিধূবাবুর কাছে এক পাগল এ...

দৃষ্টিগোচর

দৃষ্টিগোচর

জীবনে অসফল এক ব্যাক্তি আ...

মাথা ব্যাথা

মাথা ব্যাথা

কপালের ডানপাশটা ব্যাথা ক...

উধাও  || পর্ব -১

উধাও || পর্ব -১

৬৬ সালের মে মাস…. প্রমাণ...

বিলাপ

বিলাপ

আচ্ছা আমরা কি ভালোবাসি?শ...

হ্যাবলা

হ্যাবলা

গ্রামের নাম পলাশপুর।গ্রা...

আমি (পর্ব৪)

আমি (পর্ব৪)

সকালের মিষ্টি রোদ আমার চ...

পাশের বিল্ডিং এর ছাদে...

পাশের বিল্ডিং এর ছাদে...

পাশের বিল্ডিং এর ছাদে......

ডাবল জিরো

ডাবল জিরো

অংক পরীক্ষায় একেবারে দুট...

জুতা চোর

জুতা চোর

এই বিশুটা জুতা চুরি করে ...

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

মৃন্ময়ের বিয়ের সবকিছু ঠি...

আমি এমনই

আমি এমনই

যখন চারিপাশে অশান্তি অনু...

পথশিশু

পথশিশু

লাবণ্য,  একজন পথশিশু। পথ...

অপেক্ষা

অপেক্ষা

অপেক্ষা, এই জিনিসটা খুব ...

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে

প্রতিদিন যখন সন্ধ্যা নাম...

অর্পন

অর্পন

ভোরের সূর্য উঠার ঠিক আগ ...

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা —ফল্টুদ...

জিহাদ বাবু

জিহাদ বাবু

 হাসি হাসি আর হাসি রিফাহ...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৩)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৩)

পর্ব ৩:একটু এগুনোর পর শা...

মিঠু

মিঠু

  আমি মিঠু। পুরো নাম মিঠ...