রেলস্টেশনটার পিছনের দিকের যে বস্তিটা আছে,সেই বস্তিটাতেই পিল্টু থাকে।
ওর মা নেই! পিল্টুর বাবা স্টেশনে হকারি করতেন —সেখানে পিল্টুর বাবার সাথে একটা দূর্ঘটনা ঘটে,পিল্টুর বাবার একটা হাত কনুই পর্যন্ত ট্রেনে কাটা পড়ে আর বামপাটা ভেঙে যায়।তখন থেকে পিল্টুর বাবা আর কোনো কাজ করতে পারেন না।
তখন থেকে পিল্টু হকারি করা শুরু করলো। কখনো শশা-গাজর,কখনো সেদ্ধ ডিম,কখনো কদবেল —যেসময় যা পারে।
কখনো পিল্টু ম্যাগাজিন-নিউজপেপারও বিক্রি করে। পিল্টু একটু-আধটু পড়তে পারে। তাই মাঝে-মধ্যে ও ওই ম্যাগাজিনগুলো বা নিউজপেপারগুলো পড়ে—পিল্টু পড়তে ভালোবাসে।পিল্টুর "কিশোর আলো" নামে একটা ম্যাগাজিন দারুণ পছন্দ হয়েছে। ওতে কত সুন্দর-সুন্দর গল্প থাকে,কমিক্স থাকে!কত রঙিন ওইটা!কিন্তু নিজের কাছে একটাও রাখতে পারে না—ওগুলো যে বিক্রি করতে হবে!কিন্তু ও পড়ে ঠিকই।
সারাদিন পিল্টুর স্টেশনেই কেটে যায়—ট্রেনে ট্রেনে উঠে জিনিস বিক্রি করে। সবমিলিয়ে সারাদিনে ওর আর ওর বাবার খাওয়ার খরচটা হয়ে যায়।
পিল্টুর বয়স ১৫। থ্রি কোয়াটার একটা ময়লা প্যান্ট,লম্বা হাতা একটা শার্ট (হাতাগুলো গুটিয়ে রাখে) পড়েই পিল্টু স্টেশনে ঘুরে বেড়ায়।
রোদে পুড়ে পুড়ে ওর চেহারাটা আগের চেয়ে আরো বেশি কালো হয়ে গেছে।চুলগুলো উশকো-খুশকো হয়ে থাকে সবসময়। চোখগুলো যেন ভেতরে ঢুকে গেছে। পিল্টু আগের চেয়ে আরো রোগাও হয়ে গেছে।
সারাদিন শেষে বাজার থেকে মাছ-সবজি কিনে বাড়ি ফিরে।
তারপর চান-টান করে আবার চুলোয় রান্না চাপাতে হয় পিল্টুর। সব কেটে-কুটে দিলে পিল্টুর বাবাও একজায়গায় বসে রান্না করতে পারেন, তখন পিল্টু একটু জিরিয়ে নেয়।
পিল্টু বেশি করে রান্না করে ফেলে যাতে রাতে খেয়ে যা থাকবে তা যেন পরেরদিন সারাদিন চলে যায়।পরেরদিন আবার স্টেশন থেকে ফেরার পথে বাজার করে নিয়ে আসবে তারপর আবার রান্না করবে—এভাবেই চলে পিল্টুদের দিন!
পিল্টুর অনেকসময় অনেকবেশি কষ্ট হয়—ওর মন চায় না আর এসব করতে।কিন্তু পরেই মনে হয়,যদি ও এসব আর না করে তাহলে ও আর ওর বাবা খাবে কি?
তখনই আবার পিল্টু কাজে চলে যায়।
~অনিক বিশ্বাস
২.৩.২০২২
১টি মন্তব্য
Nipendra Biswas
২ বছর আগে
মন কেড়ে নেওয়া গল্প
মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে