পথশিশু


পথশিশু

লাবণ্য,  একজন পথশিশু। পথই তার বসবাস। গায়ে ছেঁড়া জামা, এই ছেঁড়া জামা দিয়েই তাকে ষড়ঋতু পার করতে হয়। অবশ্য মাঝেমধ্যে অনেক স্বেচ্ছাসেবীরা তাকে নতুন কাপড় উপহার দেয়। তখন লাবণ্য সেটি পড়ে সারাদিন পথে পথে হেঁটে বেড়ায়। লাবণ্য জানে না তার মা বাবা কে,  ছোটোবেলা থেকে এক মহিলাকে সে দেখে এসেছিল, তাকে লাবণ্য মাসি বলে ডাকতো।  সেই মাসিও একদিন হঠাৎ জ্বরে মারা যায়।তখন লাবণ্যর বয়স পাঁচ বছর। সেই থেকে পথ হলো লাবণ্যর বাসস্থান। লাবণ্যর বয়স এখন দশ বছর সারাদিন পথে-ঘাটে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়, কখনো কখনো ভিক্ষে করে খায় কিন্তু লাবণ্যর ভিক্ষে করতে ভালো লাগেনা। তাই লাবণ্য মাঝে মাঝে ফুল বিক্রি করে।
 কোনো কোনো দিন তাকে অনাহারেই দিন পার করতে হয়।  অবশ্য অনাহারে থাকা এখন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে,  তাই আর এখন বেশি খারাপ লাগে না।  লাবণ্যের সবচেয়ে পছন্দের দিনগুলো হলো রামাদানের দিনগুলো।  লাবণ্য জানে প্রতি বছরের কোনো এক সময় প্রতিদিন মানুষ সন্ধ্যােবেলা অনেকগুলো ভালো ভালো খাবার দিয়ে যায়,  আবার জামাও দেয়,  তখন তার যেন খুশির সীমা থাকে না। তাই লাবণ্য অপেক্ষা করে থাকে সেই দিনগুলোর জন্য।  লাবণয় ভাবে যদি একবেলা পেট ভর্তি করে খেলে পেটেই খাবারগুলো থেকে যায় মানে রিজার্ভ থাকে তাহলে তো আর তার অনেকদিন খিদেই লাগত না, খবার নিয়ে আর চিন্তাই থাকতো না।
সে দেখে তার বয়সী অনেক শিশু ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে স্কুলে যায়।তারও স্কুল যেতে ইচ্ছে করে।  একবার সে এক স্কুলের সামনে এসে দাঁড়ায়, ভাবছিল সেও যদি পড়াশোনা করতে  পেত। হঠাৎ করে কই থেকে একজন লোক এসে তার হাতে দুই টাকার পয়সা ধরিয়ে দেয়,  লাবণ্য হতবাক হয়ে যায় তার খুব রাগ হয়।  সে তো ভিক্ষে করে আসেনি ,  তাহলপ কেন তাকে এভাবে টাকা দিল, সে কি চেয়েছে যখন চায় তখন তো দেয় না তখন তো ধাক্কা মেরে দুরে ফেলে দেয়!  সে এখানে স্কুল দেখতে এসেছে ভিক্ষে করতে আসেনি। তখন সে রাগে দুঃখে পয়সাটা ছুড়ে ফেলে কান্না করতে করতে দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়।
লাবণ্যের বর্ষা আর শীত কাল একদমই পছন্দ না। বৃষ্টি তার একদমই ভালো লাগে না।  একবার কয়েকজন আপু ভাইয়া তাকে নতুন খুব সুন্দর একটি জামা দিয়েছিল। সে সেটি পড়ে খুশিমনে রাস্তায়  হাঁটছিল,  হঠাৎ তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়,  তার শখের সেই জামাটি বৃষ্টির পানিতে একদম ভিজে যায়,  কাঁদা লেগে পুরা জামাটাই  নষ্ট হয়ে যায়। তার সব খুশি মাটি হয়ে যায়  সে সেদিন অনেক কেঁদেছিল তারপর থেকে বৃষ্টি লাবণ্যের একদমই পছন্দ না!  আবার শীতকাল এলেই সে বুঝি কেঁদে দেয়। এই এক শীতেই তার মাসি হঠাৎ মারা যায় আর শীত লাবণ্যের সহ্য হয় না,  তার গরম কাপড় নেই  শীতে তার গা কাঁপতে থাকে, তখন তার মনে হয়  এর থেকে বুঝি মরণ ভালো!  এক শীতে এক দোকানের ধারে লাবন্য কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে যায়,  তার যখন চেতনা ফিরে তখন দেখে তার গায়ে একটা চাদর দেয়া।  তাকে কে এই চাদর দিয়ে গেছে তা সে জানে না। তবুও অজ্ঞাত সেই ব্যাক্তির জন্য লাবণ্যের মনে অনেক ভালোবাসা,  শ্রদ্ধা জাগে।  সে পুরো কান্না জুড়ে দেয়।  
শীতকালে লাবণ্য দেখতে পায় পথের ধারে হরেক রকমের পিঠার দোকান বসে কিন্তু দোকানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেই দোকানের মালিক তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়।  একবার এক মধ্যবয়স্ক  লোক তাকে আধা খাওয়া একটা পিঠা খেতে দেয় ।  লোকটির শিশু অর্ধেক পিঠা খেয়ে আর খেতে চাচ্ছিল না তখন তিনি সেই পিঠাটি লাবণ্যকে খেতে দেন।  লাবণ্য আনন্দের সাথে পিঠাটি খেয়ে নেয়।  লাবণ্য ভাবে যদি তারও মা - বাবা থাকতো তাহলে আর তাকে এভাবে রাস্তায় রাস্তায় অনাহারে ঘুরতে হতো না,  এভাবে জীবনযাপণ করতে হতো না,  পথশিশু হতে হতো না..... 


 


অর্পন
তিনি এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

প্রথম মন্তব্য লিখুন


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

~পিল্টু

~পিল্টু

রেলস্টেশনটার পিছনের দিকে...

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

১.সুবিমলবাবু অনেকদিন পর ...

প্রিয় মা

প্রিয় মা

  প্রিয় মা,কেমন আছো তুমি...

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

তখন আমি ক্লাস 5 এ পড়ি, স...

সব পেশাই কি সমান???

সব পেশাই কি সমান???

সবাই বলে সব পেশাই সমান!স...

উধাও  || পর্ব -১

উধাও || পর্ব -১

৬৬ সালের মে মাস…. প্রমাণ...

কেমন আছো তুমি

কেমন আছো তুমি

 নিলিকে আমি আমার মনের কথ...

কয়েকদিন হাসপাতালে

কয়েকদিন হাসপাতালে

একবার আমার কয়েকদিন হাসপা...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৩)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৩)

পর্ব ৩:একটু এগুনোর পর শা...

ডাবল জিরো

ডাবল জিরো

অংক পরীক্ষায় একেবারে দুট...

রাত

রাত

সোউউ… করে একটা অটো চলে গ...

শুভ্র ও রাইসা

শুভ্র ও রাইসা

বিকাল বেলা বাহিরে মেঘ ডা...

আমি চঞ্চলা

আমি চঞ্চলা

      গল্প পড়ার শখ আমার ...

নীল দ্বীপ (পর্ব ৬)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৬)

পরদিন সকালে শুভ্র আর মৃন...

পড়ন্ত বিকেলে...

পড়ন্ত বিকেলে...

পড়ন্ত বিকেলে...সারাদিন ঝ...

নাম হীন গল্প - শেষের অংশ

নাম হীন গল্প - শেষের অংশ

প্রথম অংশের পর…     তখন ...

মিষ্টি ভালোবাসা

মিষ্টি ভালোবাসা

বউটা আজকে আমার উপর অনেক ...

আমি (পর্ব৬)

আমি (পর্ব৬)

"না আপু।" "এই সেই পড়বি।গ...

কুলফিওয়ালা

কুলফিওয়ালা

কুলফি খেতে ভীষণ ভালোবাসে...

আমি এমনই

আমি এমনই

যখন চারিপাশে অশান্তি অনু...