১.
আজকালকার দিনে চাকরি পাওয়াটা খুবই দুরূহ ব্যাপার।পড়ালেখা শেষ করে বসে আছি অথচ চাকরির খোঁজ নেই। আমার কোয়ালিফিকেশন্স এত একটা ভালো না তবু মনে করেছিলাম কিছু একটা চাকরি তো জুটবে কপালে।কিন্তু না,আজ পর্যন্ত ৩০টারও অধিক ইন্টারভিউ দিলাম—কোনো কাজ হলো না। আশা ছেড়ে দিয়েও ছাড়িনি মাঝে-মধ্যে এখনও চাকরির খোঁজ করি।
২.
আমি বড়লোক বাপের একমাত্র ছেলে। চাকরির এত একটা দরকারও নেই।কিন্তু আমি অন্য কোনো বড়লোক ছেলের মতো না,আমার বেকার বসে থাকতে ভালো লাগে না। ছোট-খাটো একটা চাকরি পেয়ে গেলেই হবে—আমার হাতখরচটা চালাতে পারবো।মানুষ তো পার্ট টাইম জবও করে আমি না হয় পার্ট টাইম জবকেই ফুল টাইম করবো।একটা কুরিয়ার বয়ের চাকরি নিয়ে নেবো ভাবলাম, কিন্তু ভাগ্য আমার সাথে এমন পরিহাস করছে যে—আমি কুরিয়ার বয়ের চাকরিও পাচ্ছি না!
৩.
আজ এক কুরিয়ার অফিসে জবের খোঁজ করতে গেলাম—ওখানেও কোনো কিছু হলো না।
অফিস থেকে বেরোতেই একটা লোক আমাকে এসে নিজে থেকেই পরিচয় দিলেন। আমিও লোকটাকে হাই-হ্যালো বললাম।তখন আমি লক্ষ্য করলাম লোকটাকে আগেও আমি দেখেছি।আমার ঠিক মনে আছে গত কয়েকদিন থেকে আমি লোকটাকে দেখছি।আমি যখনই চাকরির খোঁজে বা অন্য কোথাও বেরিয়েছি তখনই লোকটাকে দেখেছি।আমি
প্রথমে অবাক হয়ে গেলেও লোকটা আমার অবাক হওয়ার কারণটা ভুলিয়ে দিলো।লোকটা আমাকে একটা চাকরির অফার দিলো–কুরিয়ার বয়ের-ই। এতদিন ধরে চাকরি খোঁজছিলাম পাচ্ছিলাম না আর আজ নিজে থেকে আমাকে চাকরির অফার দিলো।আমি চাকরিটা নিয়ে নিলাম।যাক,এতদিন পরে কপালে একটা চাকরি জুটলো তাহলে।আমি কিসের জন্য যে অবাক হবো সেটাই ভুলে গেছি!
৪.
আমার আবার এমন লজ্জ্বা-সরম নেই যে,আমি বড়লোকের ছেলে,আমি কেন কুরিয়ার বয় হবো?আরে,কাজের মধ্যে আবার কিসের লজ্জ্বা?আমার বাবাও এমন না যে,তুই আমার ছেলে হয়ে কেন কুরিয়ার বয় হবি?—এসব কৈফিয়ত দিতে হবে। আমার বাবা-ই আমাকে শিখিয়েছে কাজের মধ্যে কোনো লজ্জ্বা নেই। আর আমার তো পরিবারের থেকে কোনো চাপ নেই—এমন না যে পরিবারে টাকা দিতে হবে, পরিবারের খরচ চালাতে হবে।আমার শুধু নিজের খরচটা চালানোর জন্য এই চাকরিটা দরকার।আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছে,আমি যাতে সেল্ফ-ডিপেন্ডেন্ট হই,কারও উপর আমি যাতে নির্ভর না করি।আর এমনিও তো সারাদিন বাসায় বসে থাকি–কোনো কাজ-কর্ম করি না, আমার আবার আড্ডা-টাড্ডা দিতেও ভালো লাগে না। কুরিয়ার করার বাহানায় ঘুরাটাও হয়ে যাবে আবার টাকাও পাবো।
৫.
গত কয়েকদিন থেকে শুরু করেছি কাজটা।দিনে শুধু একটা কুরিয়ার ডেলিভারি দিতে হয়।প্রতিটা কুরিয়ারের জন্য ১৫০০টাকা দেয়।কুরিয়ারে এমনকি জানি আছে যার জন্য আমাকে এত টাকা দেয়?সারাদিন ফ্রী থাকি—কি শিফটে জানি আমাকে রেখেছে। কোনোদিন সকালে কোনোদিন বিকালে কোনোদিন আবার রাতে ডেলিভারি দিতে হয়। কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। আমার খরচ চালিয়েও অনেক টাকা জমাতে পারি।আমার বাবা আমাকে আরেকটা জিনিস শিখিয়েছে—মিতব্যয়ী হতে শিখিয়েছে,টাকা সঞ্চয় করতে শিখিয়েছে।
৬.
চাকরিটা নেওয়ার পর থেকে ভালোই কাটছে দিনগুলো। আমার ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারছি—আলতু-ফালতু খরচ না আবার, বুঝে শুনেই খরচ করি।
আজ আবার ডেলিভারি দিতে হবে রাত ১১টার দিকে। কি শিফটে যে আমি আছি বুঝতে পারছি না। টাইমের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই।
৭.
এমন একটা জায়গার ঠিকানা দিয়েছে, বলে লাভ নেই। দাঁড়িয়ে রইলাম কতক্ষণ। একটা লোক এসে পার্সেলটা নিতে যাবে তখন এমন একটা ঘটনা ঘটলো যা আমি কখনো ভাবতেও পারিনি আর হয়তো পারতামও না।
সেই লোকটা আমার থেকে পার্সেল নেয়ার সময় কয়েকজন লোক কোত্থেকে এসে জানি রিভলবার তাক করে আমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। ওই লোকটা পালাতে চেয়েছিল,রিভলবার তাক করা লোকগুলো তাকে ধরে রিভলবার দিয়ে লোকটার মাথায় আঘাত করলো।আমি ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম—কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আমাদেরকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে দিয়েছে। এবং পার্সেলটা খুলে দেখতে লাগলো লোকগুলো।
পার্সেলটা খোলার পর যা দেখলাম তা আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি।
পার্সেলটার ভেতরে ড্রাগস!আমি এতদিন ধরে ড্রাগস সাপ্লাই করছিলাম?
কেন এত টাকা দিচ্ছিলো,কেন শিফটের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই? সব একে একে মাথায় ভেসে উঠলো।
যদি সেদিন এত খুশি না হয়ে একটু অবাক হতাম,যদি একটু খোঁজ-খবর নিতাম কেন লোকটা নিজে থেকে আমাকে চাকরিটা দিলো,কেন এত টাকা দিচ্ছে তাও শুধু একটা পার্সেলের জন্য, কেন শিফটের ঠিক নেই, কেন ঠিকানাগুলো অদ্ভুত, আর প্রতিদিন কেন শুধু একটা-ই পার্সেল দিতে হয়?—আজ এভাবে ফেঁসে যেতাম না।
আমি না জেনে-ই ভুল করে ফেলেছি।এখন আর কিছু করার নেই আমার।
২টি মন্তব্য
Nipendra Biswas
৩ বছর আগে
প্লটটা দারুণ
Champa Sen Pinky
৩ বছর আগে
সত্যিই, গল্পটির বাস্তবিক প্রতিফলন বিভিন্নক্ষেত্রে দেখা যায়।
মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে