দার্শনিক ফল্টুদা


দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা —

ফল্টুদার মাথায় কদিন ধরে আবার দার্শনিক হবার ভূত চেপে বসেছে! ফল্টুদা নাকি বুঝতে পেরেছে, আসলে ফল্টুদার জন্মই হয়েছে নাকি দার্শনিক হবার জন্য! 


ফল্টুদার দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা নং ১—

আমাদেরকে ফল্টুদা তার দার্শনিক চিন্তা-ভাবনাগুলো বুঝায়।যেমন সেদিন ফল্টুদা আমাদেরকে বোঝাচ্ছিল তার একটা দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা—"বুঝলি,যারা নিজে কখনো পরিবর্তন হতে পারে না—তারা অন্যদেরকে কখনো পরিবর্তন করতে পারে না!যেমন ধর,একটা লোক নিজেই সারাদিন টই-টই করে ঘুরে বেড়ায়,তখন ওই লোকটিই যদি আবার এমন আরেকজন লোককে বোঝাতে যায় যে,কেন আরেকজন লোকটা শুধু শুধু ঘুরে-বেড়ায়!তখন আরেকজন লোকটা কিন্তু ওর কথা শুনবে না!কেন জানিস?"

আমরা সবাই জিজ্ঞেস করলাম, "কেন ফল্টুদা? "

ফল্টুদা আবার বলতে লাগলো,"কারণ,আরেকজন লোকটা মনে মনে ভাববে,'ও নিজেই তো সারাদিন টই-টই করে!আবার আমাকে বোঝাতে এসেছে! ওর কথা শোনে কে?' নিজে যখন ভালো হবি তখন আরেকজনও তোর কথা শুনবে। বলবে,না লোকটা ভালো মানুষ —ও যখন বলেছে তাহলে ভালোর জন্যেই বলেছে। "

আমি বললাম, "একদম ঠিক বলেছো ফল্টুদা। "

ফল্টুদা এবার উপরের দিকে মাথা তুলে একজন মহারাজ-মহারাজ ভাব দেখাতে লাগলো।

এমন সময় বিশু বলে উঠলো,"ফল্টুদা,এইবার আমি বুঝতে পেরেছি, কেন আমরা তোমার বাণীগুলো মেনে চলতে পারি না!"

 ফল্টুদা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,"কেন রে?"

বিশু আবার বলতে লাগলো, "আমরাও হয়তো মনে করি…..না..না..আমরা মনে করি না।তাও হয়তো এক-দুবার আপনা-আপনিই মনে হয়! "

 ফল্টুদা জিজ্ঞেস করলো,"আরে,কি মনে হয় তোর?"

বিশু বললো,"মনে হয় যে,তুমি নিজেই তো ওই বাণীগুলো মেনে চলো না। তাহলে আমরা কেন মেনে চলবো।কারণ, যে বাণীগুলো দেয়,সে নিজেই তো ওগুলো মেনে চলে না !"

 

ফল্টুদা বিশুর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে রইলো! বিশু ভয়ে উঠে —"আমার অনেক কাজ আছে বাড়িতে" বলে চলে যাচ্ছিল।আবার যাওয়ার সময় বলে গেলো, " ফল্টুূদা,রাগ করো না।কারণ,তুমিই আমাদেরকে বলে ছিলে যে,রাগ করতে নেই।এখন তুমিই যদি রাগ করো,তাহলে আমরা কি করে তোমার বাণী মানবো।যেহেতু, তুমি নিজেই মানছো না!" বলে এত দ্রুত হেঁটে ফল্টুদার বাড়ির সীমানা পার করলো যে...আমরা অবাক হয়ে গেলাম—দুটো কারণে,বিশু এত সাহস পেলো কোত্থেকে…. আর এত দ্রুত হাঁটেই বা কী করে!

তারপর তিনদিন বিশু আর ফল্টুদার মুখদর্শন করলো না!তিনদিনের বেশি ফল্টুদার রাগ আবার থাকে না!


ফল্টুদার দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা নং ২—

ফল্টুদার সাথে সেদিন যখন আড্ডা দিচ্ছিলাম।বিশু তখন এসে হাজির হলো।

ফল্টুদার রাগ তখন একেবারে কমে গেছে। আমরা সবাই জানি,ফল্টুদার রাগ তিনদিনের বেশি টিকে না।ফল্টুদার মনটা নারকেলের মতো—বাইরে দিয়ে শক্ত ভিতর দিয়ে একেবারে নরম….তুড়ি…. বেলের মতো—ভেতর দিয়ে নরম(ক্রিমের মতো) আর বাইরে থেকে অনেক শক্ত!—এই বেলের উদাহরণটা কিন্তু ফল্টুদাই দিতে বলেছে(ফল্টুদাকে না… মানে যখনই কাউকে নারকেলের উদাহরণ দেই তখন যেন নারকেলের বদলে বেল বলি!)

ফল্টুদা অনেক ভেবে-চিন্তে নাকি এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে —

সেদিন আমাদেরকে বুঝিয়ে বলেছিলো এর কারণ,"জানিস,লোকে যে বলে না যে,'ওই লোকটার মন নারকেলের মতো।ভেতর দিয়ে নরম বাইরে দিয়ে শক্ত!'—এটা আমি মনে করি না!"

"কেন?"আমরা সবাই জিজ্ঞেস করলাম। 

" কারণ, নারকেল বাইরে দিয়ে যেমন শক্ত, ভেতর দিয়েও ঠিক তেমন না তাও অনেকটাই শক্ত! তাই সেক্ষেত্রে 'ভেতর দিয়ে নরম' একথাটা বলা চলে না।" তারপর একটু থেমে বলতে লাগলো, "তারচেয়ে বলা যায়,বেলের মতো—ভেতর দিয়ে নরম, যেন ক্রিম আর বাইরে দিয়ে শক্ত! তোরা কি বলিস?" ফল্টুদা ভ্রু নাচাতে লাগলো।

আমরা ভেবে দেখলাম ফল্টুদার কথায় দম আছে—কথাটা একেবারেই ফেলনা নয়।তাই আমরাও ফল্টুদার এই দার্শনিক রকমের চিন্তা-ভাবনাটা সাদরে গ্রহণ করলাম!আর তখন থেকেই আমরা ওই নারকেলের প্রবাদটার বদলে বেলের প্রবাদটা দিতে লাগলাম! 

 

ফল্টুদার দার্শনিক চিন্তাভাবনা নং ৩—

ফল্টুদার কিছু কিছু দার্শনিক কথাবার্তা শুনে আমার ফল্টুদাকে আসলেই একজন মোটামুটি দার্শনিক বলে মনে হচ্ছে। 

যেমন ফল্টুদা সেদিন আড্ডায় আরেকটা প্রবাদের অন্যরকম একটা ব্যাখ্যা দিচ্ছিলো।

আড্ডাটা এভাবে শুরু হয়েছিলো—

ফল্টুদা আমাকে জিজ্ঞেস করলো," কিরে নীল,শুনেছি তুই নাকি বাপ্পার চেয়ারে ছোট আলপিন রেখেছিলি?তাতে তো বাপ্পার অবস্থা একেবারে সাড়ে সর্বনাশ!আমার কাছে তো তোর নামে নালিশ করেছে….'

"কে?...বাপ্পা? " আমি জিজ্ঞেস করলাম। 

" হ্যা।"

" ফল্টুদা তুমি এখন আমার চেয়ে বাপ্পাকে বেশি করছো?"

" আরেহ্,না..না।ও নালিশ করেছে বলে আরকি তোকে জিজ্ঞেস করলাম। "

"তাহলে,ঠিক আছে।আর ফল্টুদা শুনে রাখো,আমি কিন্তু ওই ষড়যন্ত্রের সাতেও নেই, পাঁচেও নেই। "

" সে আমি জানতামই, তুই এসব করতে পারিস না।"

আসলে আমিই আলপিন রেখেছিলাম!ওই বাপ্পাটা বেশি জ্বালাচ্ছিলো কয়দিন ধরে,তাই করে দিলাম ওর সাড়ে সর্বনাশ! কিন্তু ফল্টুদাকে তো আর এসব জানতে দিতে পারি না।তাই একটু মিথ্যে বলতে হলো।

"আচ্ছা নীল,এখন যে বললি—তুই এসবের সাতে নেই,পাঁচে নেই-এর অর্থ কি বোঝাচ্ছে বল তো?"ফল্টুদা আমাকে জিজ্ঞেস করলো।

আমি বললাম," এই আরকি।মানে,আমি এই এসব করি নি।"

" তা বুঝলাম।তোর কথা ঠিক আছে। " একটু থেমে ফল্টুূদা আবার বলতে লাগলো," কিন্তু আমি এই প্রবাদটার অন্যরকম এক ব্যাখ্যা দিতে পারি,যাতে করে সবাই এমনকি একটা বাচ্চা পর্যন্ত যেন এই প্রবাদটা সহজেই বুঝতে পারে।এটাকে একটা প্রবাদই বলা যায়—জানিস তো?"

"জানি।তুমি ব্যাখ্যাটা একবার বলো।"

"শোন,এই প্রবাদটাকে তো এইভাবেও বলা যায় যে—আমি এর সাথেও ছিলাম না,এর পাছেও ছিলাম না।মানে,খুব সোজা—সাতের বদলে সাথে আর পাঁচের বদলে পাছে।দাঁড়া বুঝাচ্ছি। " গলাটা কেশে একটু পরিষ্কার করে নিয়ে আবার বলতে লাগলো," যেমন ধরলাম,বাপ্পা তোর নামে যে ষড়যন্ত্রটা করলো।এখন তুই যদি বলিস যে,'আমি এই ষড়যন্ত্রের সাথেও ছিলাম না,এর পাছেও ছিলাম না মানে পিছনেও ছিলাম না।তাহলে কথাটার কি মানে হলো বল তো?"

" তুমিই বলো না।"

"মানে তুই এই ষড়যন্ত্রের সাথে বা পিছনে ছিলি না।এই ষড়যন্ত্রের কোনোকিছুতেই তুই ছিলি না।তারমানে, এইটার সাথে তোর কোনো সম্পর্কই নেই।খুব সহজ হয়ে গেলো না?এভাবে বোঝালে সবাই এমনকি একটা বাচ্চা পর্যন্ত এই কথাটার অর্থ খুব সহজেই বুঝতে পেরে যাবে।বাচ্চা বলতে আবার যেন একেবারে শিশুবাচ্চা বুঝে ফেলিস না।কারণ, তারা তো কিছুই বোঝার ক্ষমতা রাখে না—তাহলে এই কথার অর্থ যত সহজই হোক, তারা এর অর্থ কিছুই বুঝবে না।আমি বাচ্চা বলতে একটু বড় বাচ্চাদের বুঝিয়েছি কিন্তু। "

" আরে,আমরা এটুকু তো অবশ্যই বুঝি।এটা আবার আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে না।" নকুল বললো।

" আচ্ছা,এখন বল কেমন দিলাম?"

"দারুণ, ফাটিয়ে দিয়েছো ফল্টুদা।"বিশু বললো।

" আমারও ব্যাখ্যাটা দারুণ লাগলো।" আমি বললাম। 

" আমারও।" নকুল বললো।

সবাই ফল্টুদার জয়গান করতে লাগলাম। 

" তাহলে?সাতে-পাঁচে থেকে এই সাথে-পাছের কথাটা আরও সহজ নয় কি?"ফল্টুদা গদগদ হয়ে বললো।

"হ্যা।"

"এইতো তাহলেই হলো।আরে আমাদের দার্শনিকদের তো কাজই এটা, বিভিন্ন জিনিসের সহজ ব্যাখ্যা দেওয়া। যাতে করে সবাই সেটা বুঝতে পারে।তোদের ভাগ্য যে কত ভালো যে,তোরা আমার মতো একজন দার্শনিকের সাথে বসে আড্ডা দিস।তোরা কি জানিস সেটা?" ফল্টুদা ভ্রু নাচাতে লাগলো। 

 আমরা কিছু না বলে মাথা ডানে-বামে নাড়াতে নাড়াতে মুচকি মুচকি হাসলাম!

 

ফল্টুদার ভাবনার শেষ নেই —

ফল্টুদার ভাবনার তো শেষ নেই! ফল্টুদা যে আরো কতকিছু ভাবতে পারে,কে জানে!

কিন্তু আমাকে এখানেই শেষ করতে হবে।

কারণ,ফল্টুদার সব চিন্তা-ভাবনাগুলো বলতে গেলে সারারাত-দিন শেষ হয়ে গেলেও ফল্টুদার চিন্তা-ভাবনার কথা বলে শেষ করতে পারবো না!

তাই এই তিনটা চিন্তা-ভাবনা উদাহরণ হিসেবে বলে রাখলাম। 

অন্যগুলো আরেকদিন বলা যাবে।

অতএব,এখানেই শেষ করি।


Nipendra Biswas
তিনি এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

২টি মন্তব্য

Nipendra Biswas

Nipendra Biswas

২ বছর আগে

ফল্টুদার আরও গল্প চাই

Anik Biswas

Anik Biswas

২ বছর আগে

@nipendrabiswas লিখছি... ফল্টুদার প্রতি এত ভালোবাসার জন্য —ফল্টুদা আপনাকে "ধন্যবাদ" দিতে বলছে।তাই ধন্যবাদ!🙂


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

ইসরাত বললো,"ডিনার করেছেন...

রিক্সাচালক

রিক্সাচালক

প্রখর রোদে দাড়িয়ে আছে আয়...

অমাবস্যার রাত

অমাবস্যার রাত

গল্পটা খুব আগের না এইতো ...

ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর  বাড়িতে কয়েকদি...

প্রতিবিম্ব

প্রতিবিম্ব

আয়নার সামনে বসে নিজেকে দ...

যখন সন্ধ্যা নামে

যখন সন্ধ্যা নামে

প্রতিদিন যখন সন্ধ্যা নাম...

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

১.ফল্টুদার নামের ইতিকথা—...

কিছু করার নেই

কিছু করার নেই

 ১.আজকালকার দিনে চাকরি প...

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

❝বহু দিন ধরে, বহু ক্রোশ ...

টিভিকথন

টিভিকথন

আমাদের ছাদে একটি স্টোররু...

শিকার

শিকার

রাত ১ঃ৩০টা।অমাবস্যার রাত...

পরীক্ষার পূর্বদিন

পরীক্ষার পূর্বদিন

সারাবছর ভালো করে পড়েনি প...

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

তখন আমি ক্লাস 5 এ পড়ি, স...

ডাবল জিরো

ডাবল জিরো

অংক পরীক্ষায় একেবারে দুট...

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

আশ্চর্য এক সুগন্ধ

লেখিকাঃ রোদেলা রিদাএকবার...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৪)

ইসরাত কাছে এসে বললো,"আচ্...

কে ছিল???

কে ছিল???

আমি আগে ৯ -১০ টার মধ্যেই...

আমি (পর্ব৬)

আমি (পর্ব৬)

"না আপু।" "এই সেই পড়বি।গ...

সপ্ন যখন হ য ব র ল

সপ্ন যখন হ য ব র ল

আমি এখন বিয়ে বাড়িতে বাল্...

শেষ

শেষ

      ফোন রিং হওয়ার শব্দ...