আশ্চর্য এক সুগন্ধ


আশ্চর্য এক সুগন্ধ

লেখিকাঃ রোদেলা রিদা


একবারের ঘটনা,

আমার পড়ার টেবিল জানালার পাশে আর তখন আমাদের বিল্ডিংএও  মিস্ত্রিরাও কাজ করছিল।   এক বিকেলে আমি আমার পড়ার টেবিল  এ বসে নোট করছিলাম এমন সময় খুব সুন্দর একটি গন্ধ আমার নাকে আসে।  আঁতরের গন্ধ যেমন হয় ঠিক তেমনি সেই গন্ধ।  গন্ধটা হালকা।  তখন আমার জানালার কাছে দেয়ালে মিস্ত্রিরা কাজ করছিল তাই ভাবলাম মিস্ত্রিদের মধ্যে হয়তো কেউ আঁতর মেখে এসেছে। কিন্তু যখন আমি জানালার কাছে  গিয়ে দাঁড়ালাম,  তখন আর কোনো গন্ধই পেলাম না।  একটু অবাকই হলাম। যাই হোক তখন আর এই বিষয়ে বেশি মাথা ঘামালাম না।

সন্ধ্যায় বই নিয়ে বসেছি,  বই পড়তে পড়তে আমি আবারও সেই গন্ধটা অনুভব করলাম,  অদ্ভুত বিষয়টি হলো তখন  কোনো মিস্ত্রিও কাজ করছিল না আর আমি যেখানে আছি শুধু সেই জায়গা থেকেই গন্ধটা পাচ্ছি। দূরে গেলেও পাচ্ছি না আবার কাছে আসলেও পাচ্ছি না। যেই জায়গায় আছি কেবল ওই জায়গায়ই গন্ধটার উপস্থিতি টের পাচ্ছি।  কি আশ্চর্য!  

আমি বেশ কয়েকদিন ধরেই সেই অদ্ভুত গন্ধটা পাচ্ছিলাম কিন্তু বিষয়টিকে বেশি পাত্তা দেইনি।
তারপর একদিন আপু বিছানায় বসে কাজ করছিল আর আমি পাশের সোফায় বসে ছিলাম।  তখন আপু বলল, 
 "রিদা,  আমি কেমন জানি একটা গন্ধ পাচ্ছি! "
আমি, " কিসের গন্ধ? কেমন গন্ধ? " 
আপু,"কি জানি কিসের গন্ধ! কিন্তু গন্ধটা বেশ সুন্দর! "
আমি,"আঁতর আঁতর??"
আপু," হ্যাঁ, কই  থেকে আসছে?"
আমি,"কি জানি কই থেকে আসছে! আমিও প্রায় পাই।  মনে হয় মিস্ত্রিদের মধ্যে কেউ হয়তো আঁতর মেখে আসে!" 
আপু,"হতে পারে.."

তারপর সন্ধ্যায় আমি আবার আপুকে বলি,
"আপু গন্ধটা আবার পাচ্ছি! "
আপু বলল," জিনের গন্ধ! "
আমি,"কিহ!!! জিনের গন্ধ!?" 
আপু,"হুমম,  জিন থাকলে এমন গন্ধ পাওয়া যায়! " 
আমি, "মাথা কি তোমার ঠিক আছে?"
আপু,"হ্যাঁ, আমার মাথা ঠিকই আছে!  আমি শুনেছি, আশেপাশে জিন থাকলে এরকমন আঁতর এর মতো গন্ধ পাওয়া যায়! "
আমি,"Ow..wow.. জিন! ভালো হলো, তাহলে জিন এখম আমার সাথে সাথে থাকবে!"
 আমি মনে করছিলাম,  আপু হয়তো আমার সাথে মজা করছে। 

কিন্তু তার পরেরদিন দুপুরে আমি বিছানায় বসে জ্যামেতিক নকশা আঁকছিলাম তখন আবারও সেই গন্ধ।  আপু আমার পাশেই শুয়ে ছিল। আমি আবার আপুকে বললাম," আপু আমার আবারও সেই অদ্ভুত গন্ধ পাচ্ছি! "
আপু," আরে বললাম না,  জিন আছে! ওটা সিওর জিনের গন্ধ!  " 
আমি,"হ্যাঁ বলছে তোমাকে! "
আপু," জিন থাকলে এমন সব অদ্ভুত সুগন্ধ পাওয়া যায়! সত্যি! "

আমি আপুর কথায় পাত্তা দিলাম না। ওয় মাঝে মাঝে এমনসব পাগলের প্রলাপ পারে।  আমি আমার আর্ট খাতাটা মুখের কাছে ধরলাম। বুঝতে পারলাম গন্ধটা খাতা থেকে আসছে। আমি আপুকে ডেকে বললাম, " আপু খাতা থেকে গন্ধটা আসছে!"
আপু অবাক হয়ে বলল,"সেকি! তাহলে জিন কি তোর খাতায় আছে?! "
আমি,"আপু!-_-" 
আপু," কই দেখি তোর খাতা?"
আমি আপুকে খাতাটা দিয়ে বললাম, " দেখো..."
আপু খাতাটা তার নাকের কাছে ধরে বলল,"হুমম.. সত্যি তো খাতা থেকে গন্ধটা আসছে!  তোর খাতাকে জিনে ধরছে!  "
 আমি আপুকে আর কিছু বললাম না, " আমি আপুর কাছ থেকে খাতাটা নিয়ে নিলাম।  আমি খাতাটা ক্ষানিকক্ষণ পরীক্ষা করে বললাম, " না আপু গন্ধটা ঠিক খাতা থেকে আসছে না,  যদিও খাতার মধ্যে গন্ধটা রয়েছে কিন্তু মনে হচ্ছে এটা খাতার গন্ধ  না।" 
আপু,"কি জানি বাবা! আমার তো মনে হচ্ছে জিন-টিনই কিছু হবে! "
আমি বিরক্তিরসুরে বললাম," হ্যাঁ,  রাখোতো তোমার জিন!" 

তারপর রাতে যখন আমি সেই নকশাটা কালো পেন দিয়ে রং করছিলাম,  তখন আবারও সেই গন্ধ অনুভব করি তীব্রভবে।  আমি আবারও খাতাটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম,  বুঝলাম সেখানেই সেই গন্ধ  কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে খাতায় গন্ধটা আসবে কই থেকে? এটা তো খাতার গন্ধ  না! 
তারপর কি যেন ভেবে আমি  আমার হাতের কলমটা নাকের কাছে নিলাম।  ওমা.. দেখি কলম থেকে গন্ধটা আসছে!  কিন্তু এই পিনপয়েন্ট কলম দিয়ে তো আমি অনেক আগে থেকেই লিখি, কই  তখন তো কোনো গন্ধ পাইনি।  
কিছুক্ষণ ভাবার পর ,  পিনপয়েন্ট কলমটির প্যাকেট দেখে আমার মনে পড়ল যে,  এই কলমটি পিনপয়েন্ট নিউ ভার্সন।  বাজারে নতুন এসেছে আর বাবা কয়েকদিন আগেই এই নতুন প্যাকেটটা নিয়ে এসেছেন, তারপর থেকেই আমি সেই গন্ধটা পাচ্ছিলাম। এরপর সবকিছু আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল।  আমি সেই অদ্ভুত গন্ধটা পাচ্ছিলাম আসলে এই কলম থেকে।

আপু তার পড়ার টেবিলে মাথা নিচু করে পড়ছিল।  আমি কলমটা আপুর মুখের কাছে নিয়ে ধরে বললাম," এই যে তোমার সেই কাঙ্ক্ষিত জিন! মিস্টার পিনপয়েন্ট বল পেন জিন!  তোমার এই জিনই হলো সেই অদ্ভুত সুগন্ধের উৎপত্তিদাতা!"
আপুতো পুরোই হতভম্ব!! 
 


অর্পন
তিনি এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

১টি মন্তব্য

fe

fe

এক বছর আগে

😅😅আমিত ভাবছিলাম জ্বিন নাকি ভর করলো ওমা এখন দেখি কলমপর কারিস্মা😅😅


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

সব পেশাই কি সমান???

সব পেশাই কি সমান???

সবাই বলে সব পেশাই সমান!স...

রোহান বিল্লা

রোহান বিল্লা

     রোহান বিল্লা   লেখি...

কুলফিওয়ালা

কুলফিওয়ালা

কুলফি খেতে ভীষণ ভালোবাসে...

রিক্সাচালক

রিক্সাচালক

প্রখর রোদে দাড়িয়ে আছে আয়...

অদ্ভুতুড়ে

অদ্ভুতুড়ে

কদিন আগে আমি পিসির বাড়ি ...

কে তুমি  (শেষ পর্ব )

কে তুমি (শেষ পর্ব )

                   কে তু...

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

সুবিমলবাবুর স্মরণীয় বাস জার্নি

১.সুবিমলবাবু অনেকদিন পর ...

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

ইসরাত বললো,"ডিনার করেছেন...

দৃষ্টিগোচর

দৃষ্টিগোচর

জীবনে অসফল এক ব্যাক্তি আ...

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

            তুমি অনন্যা ...

আমি এমনই

আমি এমনই

যখন চারিপাশে অশান্তি অনু...

নীল দ্বীপ (পর্ব ৬)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৬)

পরদিন সকালে শুভ্র আর মৃন...

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

তুমি অন্যনা (শেষ পর্ব)

রনি সেখানে যেয়ে ইসরাতকে ...

আমি (পর্ব২)

আমি (পর্ব২)

আজ পূর্ণিমা রাত।ছাদে একা...

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

আমরা তো সবাই মানুষ!!!!

তখন আমি ক্লাস 5 এ পড়ি, স...

ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন.....(পর্ব ১)

ছোট দাদুর  বাড়িতে কয়েকদি...

পথশিশু

পথশিশু

লাবণ্য,  একজন পথশিশু। পথ...

পাশের বিল্ডিং এর ছাদে...

পাশের বিল্ডিং এর ছাদে...

পাশের বিল্ডিং এর ছাদে......

আমি (পর্ব৩)

আমি (পর্ব৩)

"এমনি দিসিলাম।কি করছিলি ...

জুতা চোর

জুতা চোর

এই বিশুটা জুতা চুরি করে ...