নাম হীন গল্প - শেষের অংশ


নাম হীন গল্প - শেষের অংশ

প্রথম অংশের পর… 

 

   তখন আমি লাশকাটায় পারদর্শী । আমার চাচ তখন অন্য যায়গাতে চাকরি করেন। হাসপাতাল থেকে আমাকে সহকারিও দিয়েছে তখন । একজনের নাম জমেল গ্রামের ছেলে । আর একজন নয়না । নয়নার নামটা অনেক সুন্দর এবং গ্রামের মানুষেরা সচরাচর এমন সুন্দর নাম রাখেন না । যেমন আমার নামটাইতো কেমন যেনো । সে যাইহোক, নয়নারনাম যেমন সুন্দর সে দেখতেও তেমন সুন্দর । গায়ের রঙ কালো হলেও মুখে একটা মায়া মায়া ভাব থাকতো সব সময় । যেই তাকে দেখতো সেই মুগ্ধ হতো । আমিও হয়েছিলাম । প্রতিদিন অবসর সময়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম । প্রতিদিন !! না না । প্রতিদিন না তার তো কাজ ছিলো সপ্তায় তিন দিন । তাও আবার জমেল থাকলে তাকে আসতে হতো না । যাক কাজের অবসর সময়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম । সেও মাঝে মাঝে আমাকে দেখে মুচকি হাসি দিতো । এভাবেই চলছিলো আমাদের সময় । কিন্তু এরপর হঠাৎ একদিন রাত্রি এগারোটায় হাসপাতাল থেকে ডাক পরে আমার । সেদিন আমার বন্ধ ছিলো কিন্তু জমেল আর নয়নার দিনের বেলাতে কাজ ছিলো । তাদের ও নাকি ডাকা হয়েছে । ঘুমের ঘোরে আমি রিক্সা ভাড়া করে চলে গেলাম হাসপাতালে । হাসপাতালের ডাক্তার আমাকে দেখা মাত্রই বললো ।

-          মন খারাপ করো না । এটা খেয়ে নাউ এবং তারাতাড়ি মর্গে গিয়ে লাশ দুটোর অর্গান গুলো আলাদা করে ফেলো ।

আমি কথা মতো একটা মাস্ক পড়ে হাতে স্কালপেল নিয়ে যেই মর্গে সেই লাশ কাটার ঘরে ঢুকেছি তখনি আমার কানে সেই চিরপরিচিত নুপুরের শব্দ আসলো । নয়না আমার আগেই এখানে এসেছে । নয়না আগে হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক পড়ে দাড়িয়ে আছে । আজ সে নুপুর পরে কেনো এসছে এটা জিজ্ঞাসা করতে গিয়েও করলাম না ।

 

-          আচ্ছা !! আপনাকে অর্গান কেটে আলাদা করতে বলে ? আপনি না লাশ উঠানোর কাজ করতেন ?

-          হ্যা তাই করতাম এরপর হাসপাতালের খরচায় আমাকে দুই বছড় পড়ায় এবং তাদের এখানেই আমাকে ছয়মাস ট্রেনিং দেয় । তখনতো আর শিক্ষিত মানুষ এখনকার মতো এতো সস্তা ছিলো না । আর অর্গান আলাদা করে তো আন্য কারো শরীরে লাগাতে হতো না আমাদের ।

-          আচ্ছা এর পরের অংশ বলেন শুনি ।

-          কোথায় যেনো থেমে ছিলাম ?

-          নুপুরের কথা জিজ্ঞেস করবেন করেও করলেন না ।

 

ও হ্যা । এরপর আমি টেবিলের দিকে এগুলাম । নয়না ও আমার সাথে । টেবিলের উপর যে লাশটি আছে তার মাথা একদম থেতলে গেছে । একচোখ যেনো গলে বের হয়ে এসেছে এবং আরেকটি প্রায় ঠিক আছে বলা য়ায় । চেহারা একদমি চেনা যাচ্ছে না । কিন্তু তার ভালো চোখটি দেখে কেনো যেনো আমার মনে হচ্ছিলো একে আমি চিনি । নয়না তখন বলে উঠলো ।

-          না ! তুমি একে আগে কোথাও দেখনি । দেখলে তো চিনেই ফেলতে ।

-          হ্যা... তা তো ঠিকি বলেছ ।

-          আচ্ছা আজ তুমি নুপুর পড়েছ কেনো । এমনিতে তো নুপুর পড়ে আস না হাসপাতালে ।

-          এখন থেকে আসবে ?

-          হ্যা আসবে ।

হঠাৎ যে লাশটা কাটছিলাম যে লাশটা যেনো একটু নরে উঠলো । নয়না বললো

-          আচ্ছা লাশটা তাহলে আর কিছু করতে হবে না । প্রায় সবি তো হয়েছে । এখন এটাকে শেলাই করে রেখে চলো বাড়ি যাই ।

-          অন্য লাশটার কি হবে ?

-          সেটা পরে আছে পরেই থাক ।

-          পরে থাকবে কেনো । বেশি সময় তো লাগবে না ।

-          নাহ্ থাক । চলো আজ আমি তোমাদের বাড়ি যাবো ।

-          আরে শেষ করেই যাই ।

এই বলে আমি দ্বিতীয় লাশটার কাছে গেলাম । নয়না আসলো না । সে প্রথম লাশটার ঐখানেই দাড়িয়ে রইলো । আমি লাশটার ঢেকে রাখার কাপরটা সরালাম আস্তে আস্তে । একটা মেয়ের লাশ এটা । দেখতে হুবুহু নয়নার মতো । নয়না অমনি দূর থেকে বললো ।

-          বলেছিলাম চলো যাই ।

আমি বললাম এই লাশটার চেহারা একদম অবিকল তোমার মতো ।

-          হ্যা । তার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখ ।

-          তার পায়ে তো দেখছি এক জোড়া নুপুর । নুপুর গুলোও তোমার নুপুরের মতোই ।

-          তুমি কি এখনও বুঝছো না কিছু ?

-          কি বুঝার আছে । এমন তো হতেই পারে । লোকে বলে একরকম দেখতে পূথিবীতে সাত জন আছে । আর নুপুর তো হাজার হাজার আছে একই রকমের ।

-          তাহলে এদিকে এসে হাতটা ধরো ।

আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত ধরতে গিয়ে আর ধরতে পারলাম না । সে যেনো আলোর মতো এক মানবী । তাকে স্পর্শ করা যায় না ।

-          ধরতে পারলে ? পারলে না তো ।

-          এর মানে কি ?

-          এর মানে আর কিছুই না । আমি মারা গেছি ।

-          মানে ?

-          টেবিলের উপর ঐ লাশটা আমারি লাশ ।

আমার সমস্ত রক্ত যেনো মাথার পিছনের দিকটায় এসে জমাট বাধলো । কিছুতেই নয়নার কথা আমি বুঝতে পারছি না । এর মধ্যেই নয়না বলতে আরম্ভ করলো

           আজ আমি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে চিন্তা করি তোমার বাসায় যাবো । অনেক দিন থেকেই তোমাকে কিছু বলবো বলে ভেবে রেখেছিলাম কিন্তু বলতে গিয়েও বলতে পারিনী । আজ তাই সাহস করে ভেবে ছিলাম তোমার বাড়ি গিয়ে তোমাকে আমার সব কথা বলবো । তাই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে বাড়ি গিয়ে নুপুর পরি । আর সবথেকে সুন্দুর জামাটা পরি । হাসপাতাল থেকে বের হয়ে জমেল ভাইকে বলেছিলাম আমি তোমার বাসায় যাবো সে যেনো আমার সাথে যায়। কথামতো সেও ঠিক সময় চলে আসে । বাসা থেকে বের হই এবং দুই জনে একটা রিক্সায় উঠি । রিক্সাটা কিছুদূর যেতেই একটা ট্রাক আমাদের চাপা দেয়ে চলে যায়। রিক্সা চালক কোন রকমে বেচে যায় । জমেল ভাই আর আমি বাচঁতে পারি না । তুমি একটু আগে য়ে লাশটা কাটলে সেটা জমেলের লাশ । ট্রাকের চাকার নিচে তার মাথা পরেছিলো । আমার লাশটা দেখো পেটের মধ্যে রিক্সার রড ঢুকে গেছে । অনেক যন্ত্রনা হয়েছে জানো ? অনেক চিৎকার করেছি কেউ আসেনি ।

আমি চোখে তখন কিছু দেখছি না । শুধু নয়নার গলার সর শুনতে পাচ্ছি । হঠাৎ সব জেনো হালকা হয়ে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । ভাবলাম এটা বোধয দুঃস্বপ্ন ।

 

 

ঘটনা এতটুকুই ?

-          হ্যা এতটুকুই।

-          আরো কোনো ঘটনা বলবে ?

-          না আজ অনেক রাত হয়েছে আজ আর কোনো ঘটনা বলবো না ।

পশের ঘর থেকে নুপুরের শব্দ আশলো । তারসাথে মন মুগ্ধকরা কন্ঠস্বর ।

-          সনাতন অনেক রাত হয়েছে । ছেলেটাকে বাড়িতে পাঠাও ।

-          হ্যা পাঠাচ্ছি । তোমার নুপুরে শব্দ হচ্ছে ।

-          চিন্তা করো না কেউ শুনবে না ।

-          আচ্ছা আজ তাহলে উঠতে হচ্ছে । তোমার বাড়িতেও বোধয় চিন্তা করছে ।

আচ্ছা আমি যাই তাহলে । আবার দেখা হবে । আচ্ছা সনাতন , ঐ মহিলা কে ?

-          কোন মহিলা ?

-          যে মহিলার নুপুরের শব্দ আসছিলো ।

-          তুমি শুনেছ ?

-          হ্যা ।

-          আজ থঅক অন্য একদিন বলবো ।

 

তারপর সনাতনের বাড়ি থেকে চলে আসি । এরপর আর সনাতনের সাথে তেমন কথা বার্তা হয়নি আমার। মাঝে মাঝে মনে প্রশ্ন জাগে সনাতন কি সত্তি ঘটনা বলেছে ? নাকি এটা কেবলি একটা গল্প ।


সিকন
Akash
তারা এই গল্পটি পছন্দ করেছেন ।

প্রথম মন্তব্য লিখুন


মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে


আপনার জন্য

সে.....

সে.....

এক নিমষেই কি সব শেষ হয়? ...

অপেক্ষা

অপেক্ষা

অপেক্ষা, এই জিনিসটা খুব ...

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

তুমি অন্যনা (পর্ব ৭)

ইসরাত বললো,"ডিনার করেছেন...

আমি (পর্ব৪)

আমি (পর্ব৪)

সকালের মিষ্টি রোদ আমার চ...

তুমি অনন্যা (পর্ব ৩)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৩)

পর্ব ৩:একটু এগুনোর পর শা...

কেমন আছো তুমি

কেমন আছো তুমি

 নিলিকে আমি আমার মনের কথ...

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা

দার্শনিক ফল্টুদা —ফল্টুদ...

বিলাপ

বিলাপ

আচ্ছা আমরা কি ভালোবাসি?শ...

সব পেশাই কি সমান???

সব পেশাই কি সমান???

সবাই বলে সব পেশাই সমান!স...

নীল দ্বীপ (পর্ব ৬)

নীল দ্বীপ (পর্ব ৬)

পরদিন সকালে শুভ্র আর মৃন...

তুমি অনন্যা  (পর্ব ৬)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৬)

রনির মন চাচ্ছে আবার দেখা...

তুমি অনন্যা  (পর্ব ৫)

তুমি অনন্যা (পর্ব ৫)

রনি বললো," একটা কবিতা বল...

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

ফল্টুদার পরিচয়পর্ব

১.ফল্টুদার নামের ইতিকথা—...

কে তুমি  (শেষ পর্ব )

কে তুমি (শেষ পর্ব )

                   কে তু...

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

নীল দ্বীপ (শেষ পর্ব)

মৃন্ময়ের বিয়ের সবকিছু ঠি...

প্রিয় জয়ন্ত স্যার

প্রিয় জয়ন্ত স্যার

তখন সবে হাইস্কুলে উঠেছি।...

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

তুমি অনন্যা (পর্ব ০২)

            তুমি অনন্যা ...

পরীক্ষার পূর্বদিন

পরীক্ষার পূর্বদিন

সারাবছর ভালো করে পড়েনি প...

কে ছিল???

কে ছিল???

আমি আগে ৯ -১০ টার মধ্যেই...

ডাবল জিরো

ডাবল জিরো

অংক পরীক্ষায় একেবারে দুট...