আয়নার সামনে বসে নিজেকে দেখছিলাম। অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ আয়নায় নিজের চেহারায় আগুনে পোড়া চেহারা দেখতে পেলাম — চোখগুলো বড় বড় আর জ্বলজ্বল করছিল!
আমি চমকে গেছিলাম—ভয় পেয়ে হাফাতে লাগলাম!
আবার তাকালাম আয়নায়। আমার চেহারায় দেখছিলাম তখন—আবার ওই ভয়ানক চেহারা!
আমি আর আয়নায় তাকাতেই পারছিলাম না—তাকালেই ওই ভয়ংকর চেহারাটা দেখতে পাচ্ছিলাম।
আমি আয়নার সামনে থেকে উঠে গেলাম।তারপরও চোখে ভয়ানক চেহারাটা ভাসছিল!
আমার কানে আবার কেমন একটা অট্টহাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম!ভীষণ ভয়ংকর।
আমার খুব ভয় করছিল।আমি জীবনেও এমন ভয় পাইনি।
আমি চোখে-মুখে পানি ছিটালাম।তবু যেন আমার চোখ থেকে ওই ভয়ানক চেহারাটার প্রতিবিম্ব যাচ্ছিলই না।কানেও অনবরত অট্টহাসির শব্দ!
তখন আমার চোখ থেকে যেন ওই ভয়ংকর চেহারার প্রতিবিম্বটা বের হয়ে আমাকে মারতে আসছিল—দেখতে প্রায় আমারই মতো,আমার প্রতিবিম্ব! আমার চেহারাই—আধপোড়া।আমিই আমাকে মারতে আসছি!
আমি চিৎকার করে উঠলাম।প্রতিবিম্বটা আমাতেই এসে মিশে গেছে।
আমার সাথে এসব কি হচ্ছে?
আমি ভূতে-টূতেও বিশ্বাসী নই।আর যদি কোনো ভূত থাকতো আর আমাকে মারতেই হতো—তাহলে তো কত আগেই আমাকে মারতে পারতো।
আজ পর্যন্ত অনেক খুনই তো করেছি!খুন করে সাথে সাথেই ব্যবস্থা করে ফেলেছি—কেউ টের পর্যন্ত পায় নি।
তখন তো ওদের অতৃপ্ত আত্মা আমাকে মারতেই পারতো—কিন্তু কিছুই তো হয়নি আমার?
কিন্তু আজ কেন এমন হচ্ছে?
তাহলে কি………..
আমি আমার যমজ ভাইকে খুন করেছি—এজন্যই কি ওর অতৃপ্ত আত্মা আমাকে মারতে চাচ্ছিল?আর এজন্যই কি প্রতিবিম্বটা আমার?
আগে যাদেরকে খুন করেছি—তারা তো আমার কেউ ছিল না।কিন্তু আজ আমি আমার যমজ ভাইকে খুন করেছি,আমার আপনজনকে খুন করেছি —হয়তো এজন্যই……….
কিন্তু না মেরে কি করতাম?
আমি খুন করি—এটা আমার নেশা।কিন্তু আমার ভাই এটা জেনে গেছিল।ও পুলিশকে সব জানিয়ে দিতে চাচ্ছিল।তাই-আমি ওকে অনেক বুঝালাম —যে আমি এটা ছাড়তে পারবো না।এটা আমার নেশা।কিন্তু ও কিছুতেই মানছিল না।
কত খুন করেছি — কিন্তু কেউ আমাকে ধরতে পারেনি।আজ ওর জন্য আমি ফেঁসে যেতাম!
ও আমাকে বলেছিল,যদি আমি খুন করা ছেড়ে দিই তবে ও কিছু করবে না।কিন্তু এটা আমার নেশা—কিছুতেই আমি এটা ছাড়তে পারবো না।
কিন্তু ও আমার কথা শুনছিলই না—তাই অগত্যা ওকেও আমার মারতেই হলো।
আমি যে কাউকে মারতে পারি,কিন্তু নেশা কখনো ছাড়তে পারবো না।
তাই...পুড়িয়ে মারলাম ওকে!
কিন্তু ভূত-টূত তো কিছু নেই। এসব অতৃপ্ত আত্মা-টাত্মা তো কিছুই নেই —সব মিথ্যে।
এমনসময় আমার ঘরে হঠাৎ করে ধাউ-ধাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো।আমি চিৎকার করে উঠলাম — কিন্তু অট্টহাসির শব্দ আমার চিৎকারকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে!
আমার প্রতিবিম্ব টা আমার দিকে এগিয়ে আসছে……
আমি জোরে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে গেলাম। খুব ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখলাম! আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে!
কিন্তু, আসল কথা, ওটা স্বপ্ন ছিল।সত্যি ছিল না।
আমি তো খুনও করি না এখন।খুন করবো কোত্থেকে, রক্ত দেখলেই তো আমার মাথা ঘুরায় —এই ঘটনার পর থেকে। আগুনকেও তো ভয় পাই।
আমি আমার যমজ ভাইকে খুন করেছিলাম।তখন আমার সাথে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল—কিন্তু আমার কিছুই হয় নি—সবই ছিল আমার ভ্রম!
তারপর থেকে আমি রক্ত আর আগুনকে খুব ভয় পাই।আমি খুব মেন্টালি ডিপ্রেশ্ড ছিলাম।
এই ভয়ংকর ঘটনাটা আমার সাথে ঘটেছিল—আজ আবার ওই ঘটনাটাই আমি স্বপ্ন দেখলাম।
কিন্তু, আসল কথা, ওটা স্বপ্ন ছিল!
আর ঘটনাটা আমার ভ্রম!
বিছানা থেকে উঠে আয়নাতে তাকাতেই দেখলাম—আমার সেই ভয়ংকর আধপোড়া প্রতিবিম্বটা!
তাহলে কি…… সবই সত্যি?
{গল্পটা কাল্পনিক }
প্রথম মন্তব্য লিখুন
মন্তব্য লেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগ ইন করতে হবে